ভারত থেকে চিনি-গম আমদানির পরিকল্পনা স্থগিত পাকিস্তানের

প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ভারত থেকে আবারও চিনি ও তুলা আমদানির ঘোষণা দিয়েছিল পাকিস্তান। তবে হঠাৎ করেই সেই মত বদলেছে দেশটি। কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যাবে না বলে মত দিয়েছে ইমরান খানের সরকার।

গত বুধবার পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী হাম্মাদ আজহার এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে চিনি ও তুলা আমদানি ফের শুরু করবে তার দেশ।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি (ইসিসি) বেসরকারিভাবে ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন চিনি আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে চিনির দামে ব্যাপক ফারাক থাকার কথা জানিয়েছিলেন পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী।

আর তুলা আমদানির অনুমতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, পাকিস্তানে পোশাক রফতানি বাড়ায় তুলার চাহিদা বেড়েছে। তবে গত বছর এর উৎপাদন ভালো হয়নি।

কিন্তু তার এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই বেঁকে বসে দেশটির মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ জানান, ভারত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে না দিলে তাদের পক্ষে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।

জানা যায়, বৈঠকে শেখ রশিদ, মাহমুদ কোরেশি, মানবাধিকার মন্ত্রী শিরিন মাজারিসহ পাকিস্তানের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী ভারত থেকে তুলা-চিনি আমদানির বিরোধিতা করায় বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়।

এদিকে, ভারত থেকে তুলা আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের ব্যবসায়িক নেতারা।

পাকিস্তান অ্যাপারেল ফোরামের চেয়ারম্যান জাভেদ বিলওয়ানির মতে, ভারত থেকে তুলা আমদানির অনুমতি ছিল পুরোপুরি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত এবং এই মুহূর্তে তাদের জন্য এটাই প্রয়োজন। সেই অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তানের এ ব্যবসায়িক নেতা বলেন, দেশে যথেষ্ট তুলার সুতা নেই। এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় ইসিসির প্রস্তাব বাতিল বিদেশি ক্রেতাদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেবে।

ভারত থেকে তুলা আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিলের পরপরই এর দাম বেড়ে গেছে জানিয়ে বিলওয়ানি বলেন, সরকার যদি ভারত থেকে তুলা আমদানির অনুমতি না দেয় তাহলে যেন এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে।

এই সংকটের সমাধান না হলে পাকিস্তানের টেক্সটাইল পণ্য রফতানি ব্যাপক হারে কমে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের জেরে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের ফের অবনতি হয়। সেসময় ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বরখাস্ত করে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য, রেল ও বিমান চলাচলও বন্ধ করে দেয় তারা।

তবে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছরের মে মাসে ভারত থেকে ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ইমরান খানের সরকার। ভারত বাদে বাকি সব দেশ থেকে তুলা, সুতা ও চিনি আমদানির অনুমতি রয়েছে পাকিস্তানে।

অবশ্য ভারত সরকার বলছে, পাকিস্তান চাইলেই তাদের কাছ থেকে চিনি ও তুলা আমদানি করতে পারে। এর জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন নেই। কারণ, পাকিস্তানে পণ্য রফতানিতে ভারত কোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।

সূত্র: ডন, আনন্দবাজার পত্রিকা