ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়েই ভিক্ষুক কালাচাঁদের মৃত্যু

হামিদা আক্তার, নীলফামার থেকে : কালাচাঁদ রায় পেশায় ভিক্ষুক। মৃত হরি কিশোর রায়ের পুত্র। অসহায় হতদরিদ্র শ্রী কালাচাঁদ রায় দীর্ঘদিন ধরেই ভিক্ষাবৃত্তি করেই সহায় সম্বলহীন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিনাতিপাত করতেন। ভার্গ্যরে নির্মম পরিহাসে নিদারুন কষ্টের কাছে হার না মেনে ভিক্ষার উপার্জন দিয়েই টেনে যেতেন সংসারের ঘানি। দিনের ভিক্ষা দিয়েই পার করতেন দিন। যেন নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা। দীর্ঘদিন দারিদ্রতার যাতাকলে আঁধা পিষ্টে পড়ে হাড্ডিসার শরীরে বেধে ফেলেন নান ধরণের রোগ। ধীরে ধীরে বাসা বাঁধে বিভিন্ন রোগ কালাচাঁদ রায়ের শরীরে। খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করা কালাচাঁদ আক্রান্ত হয়ে পড়ের প্যারালাইষ্ট রোগে। এ রোগের কারনে পরে ডান দিকের পা অচল হয়ে যায় তার । দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা কালাচাঁদের আর কোন উপায় থাকে না উপার্জনের। ফলে সংসারে নিদারুন কষ্টে পড়ে সে। মাথার উপড় থাকা যুবতীর মেয়ের বিয়ের চিন্তায় একেবারেই কাহিল হয়ে ভিক্ষুক কালাচাঁদ। জীবনের পরন্ত বেলায় আর কোন উপায় না পেয়ে আবারও শুরু করেন পুরনো পেশা ভিক্ষা। এক পা অচল হলেও কোন মতে লাঠির উপর ভর দিয়ে ভিক্ষার ঝুঁলি হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ভিক্ষুক কালাচাঁদ রায়। ভিক্ষা ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরতে থাকেন এ বাড়ী ও বাড়ী কিংবা এ পাড়া ও পাড়া। এভাবেই দিন কাটছে কালাচাঁদের বছর দুয়েক ধরে। এই ভিক্ষা দিয়ে দিনের শেষে কন্যা দিপ্তি রানী ও স্ত্রীকে নিয়ে দিন কাটছিলো কালাচাঁদের। ভিক্ষার ঝুলি হাতে থাকা কালাচাদের মৃর্ত্যুর ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে,বাড়ীর মালিক সারোয়ার ভিক্ষুক কালাচাঁদকে ভিক্ষা না দিয়ে গালমন্দ করায় এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় সেখানেই মৃর্ত্যু হয় ভিক্ষুক কালাচাঁদের। মূহুর্তেই এ খবর পৌছে যায় মিডিয়াকর্মী থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত।

ঘটনার দিন ২০ ডিসেম্বর বুধবার বিকালে ছুটে যায় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থল ছোটখাতা গ্রামের সারোয়ার আলমের বাড়ী। এ সময় ভিক্ষুক কালাচাঁদের স্ত্রী দিপালী রানী রায় জানান, প্রতিদিনের মতোই মুখে একটু জ্বল দিয়েই ভিক্ষার ব্যাগ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে কালাচাঁদ। দুপুরেই খবর পাই স্বামী কালাচাঁদের মৃর্ত্যু হয়েছে ভিক্ষা করতে করতেই। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাবুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভিক্ষুক কালাচাঁদের আকর্ষিক মৃত্যুর্র ঘটনায় শুরু হয় এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বিছিন্নভাবে এলাকাবাসী দাবী তোলেন, ভিক্ষুক কালাচাঁদের মৃর্ত্যু হয়েছে ভিক্ষা করা অবস্থায়। উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের মৃত গুল মামুদের পুত্র সারোয়ার আলীর বাড়ীতে ভিক্ষা করতে আসে কালাচাঁদ রায় দুপুরের দিকে। ভিক্ষা নিয়ে কালাচাঁদ বসে পড়ে বাড়ীর একটি বেড়ার সাথে। আর সেখানেই তার মৃর্ত্যু হয়। আর এ মৃর্ত্যুকে ঘিরে স্থানীয়রা ঘোলাপানিতে মাছ শিকারে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। শুরু হয় ভিলেজ পলেটিক্স। ভিক্ষুকের এ আকর্ষিক মৃর্ত্যুকে ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে পুলিশ প্রসানের হস্তক্ষেপে। ডিমলা থানা পুলিশের এসআই মাসুদ সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিবারের স্ত্রী-কন্যার কোন অভিযোগ নেই কালাচাঁদের মৃর্ত্যুকে ঘিরে। ফলে পুলিশ মৃত ভিক্ষুক কালাচাঁদের প্রাথমিক সুরুত হাল রিপোর্ট সম্পন্ন করে এবং অভিযোগ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন ।