মাদারীপুরে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চান যারা!

মাদা১ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। মাদারীপুর-২ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চারজন। তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য শাজাহান খান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। মাদারীপুর-৩ আসনে সবচেয়ে বেশি পাঁচজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান, সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম, কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ভাই সৈয়দ আবুল হাসান।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-২ (রাজৈর সদর একাংশ) আসনে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। ওই আসনে প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। একই সঙ্গে মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার-সদর একাংশ) আসনের জন্যও নাছিমের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে দলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান খানসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী বাহাউদ্দিন নাছিম দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ কারণে আমরা সবাই একজোট হয়ে তাঁর জন্য ফরম সংগ্রহ করেছি। মাদারীপুর-২ আসনে পরিবর্তন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের দাবি। সাধারণ জনগণ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা এখন আর শাজাহান খানকে চান না। তাঁরা পরিবর্তন চান।’

অন্যদিকে সোমবার অনুসারীদের নিয়ে মাদারীপুর-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শাজাহান খান। এ বিষয়ে শাজাহান খানের মুখপাত্র ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মাদারীপুর-২ আসনে শাজাহান খানই দলীয় মনোনয়ন পাবেন, এটা আমরা নিশ্চিত। রাতে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়ে গেছে।’

মাদারীপুর ৩ আসনেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নাছিম

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। তিনি ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। কিন্তু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এ আসনে বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নেতা-কর্মীরা।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সবার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান। ৫ নভেম্বর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগমের নেতৃত্বে উপজেলার নেতা-কর্মীরা ঢাকায় গিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে ৭০ পাতার একটি বইয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। ওই সময় নেতা-কর্মীরা বাহাউদ্দিন নাছিমকে আবার মাদারীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। এ জন্য বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, বাহাউদ্দিন নাছিমের বাড়ি সদরে হওয়ায় কয়েক বছর ধরে সদর ও রাজৈর উপজেলার আওয়ামী রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা- সমাবেশে দীর্ঘদিন ধরে শাজাহান খানের পরিবর্তে বাহাউদ্দিন নাছিমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও শাজাহান খানের তুলনায় বাহাউদ্দিন নাছিমের আধিপত্য বেশি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বড় অংশটি নাছিমের অনুসারী। বিরোধ থাকায় সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি কমিটিও আছে। এরপরও বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুর-২ আসনে মনোনয়ন না পেলে মাদারীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন নেতা-কর্মীরা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে তাঁরা মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে নূর-ই-আলম চৌধুরী এবং মাদারীপুর-২ ও ৩ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম এককভাবে রেজল্যুশন করে প্রস্তাব করেছেন। এখানে অন্য যাঁরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে করেছেন। তৃণমূলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ মনোনয়ন পেলে রাজনীতির মেরুকরণে পরিবর্তন হতে পারে। বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে। এমনকি দলে বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হবে বলে তিনি মনে করেন।