মৌসুম ছাড়া সারের বাড়তি দাম, নেই তদারকি

বোরো বা আমনের মৌসুম না হলেও যশোরের মণিরামপুরে চলতি রবি চাষিদের বাড়তি দামে সার কিনতে হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই সার ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত দাম কাটছেন কৃষকদের কাছ থেকে। সরকারি দামে কোনো প্রকারের সার পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের কৃষক। প্রকারভেদে তাঁদের প্রতিকেজি সার ৪ থেকে ১২ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

এদিকে সার কিনতে যেয়ে কৃষক দামে ঠকলেও এর কোনো তথ্য নেই উপজেলা কৃষি দপ্তরে। বাজার তদারকিতে দপ্তরটির নেই কোনো উদ্যোগ। গত এক মাসে উপজেলায় এ সংক্রান্ত কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি।

কৃষকরা বলছেন- কেবল মাত্র আমনের মৌসুম শেষ হয়েছে। এখন সরিষা, মসুর, ভুট্টা ও শীতকালীন সবজির মৌসুম চলছে। আমনে আমরা যে বাড়তি দামে সার কিনেছি। এখনো সে দামে সার কিনতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ইউরিয়া ২৫-২৬ টাকা, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ৩০-৩৪ টাকা, ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ড্যাপ) ২২-২৬ টাকা ও মিউরেট অব পটাশ ২৪-২৫ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। সরকারি পরিবেশকরা কিছুটা নিয়ন্ত্রনে সার বিক্রি করলেও বাইরের খুচরা সার বিক্রেতারা ইচ্ছেমত দাম কাটছেন।

উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য মতে- চলতি নভেম্বরে উপজেলায় ১৫ মেট্রিকটন ইউরিয়া, ৪.৮৫ টন টিএসপি, ১০.০৫ টন এমওপি এবং ২০.৮৫ টন ডিএপি বরাদ্দ এসেছে। প্রতিকেজি ইউরিয়া ও টিএসপি ২২, এমওপি ও ডিএপি কেজি প্রতি ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দপ্তরটির ভাষ্যমতে- চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ২০০ হেক্টর জমিতে মসুর, ১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি ও ৯৪ হেক্টর জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে।

খেদাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন- কদিন আগে সরিষা বুনার সময় স্থানীয় বাজার থেকে ২৬ টাকা করে ড্যাব কিনেছি।

মশ্মিমনগর এলাকার কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন- ৬ কাঠা সরিষা বুনিছি। খেতে ছিটানোর জন্য কাঁঠালতলা বাজার থেকে ৬ কেজি ইউরিয়া ও ৬ কেজি ড্যাব ২৫ টাকা করে কিনিছি। দোকানদার অন্য দস্তা সার না নিলে এ সার বেচতে চায়না।

খেদাপাড়া ইউনিয়নের সারের খুচরা পরিবেশক আলী হোসেন বলেন- এ মাসে শুধু ইউরিয়ার বরাদ্দ পেয়েছি। তালিকা করে কৃষকদের কাছে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা সার বিক্রেতা বলেন- আমাদের ইউরিয়ার কেজি ২৪ টাকা, টিএসপি ৩১ টাকায়, ড্যাব ১৯ টাকা ও পটাশ ২২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এরপর পরিবহন খরচ আছে। ২-৪ টাকা লাভ না হলে চলব কি করে।

এদিকে কৃষকেরা বলছেন- আমন মৌসুমে বাড়তি দামে সার কিনতে হয়েছে। আমনে যে পরিমান খরচ হয়েছে সে হিসেবে ধানের দাম পাচ্ছি না। সামনে বোরোতে যদি এভাবে বেশি দামে সার কিনতে হয় তাহলে আর ফসল করা হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহীন ইসলাম বলেন- প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত সার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামনে বোরো মৌসুম আসলে সারের ব্যাপারে অভিযানে জোর দেওয়া হবে।