যশোরের মণিরামপুরে কার্ড দেখিয়েও মিললো না টিকা!

যশোরের মণিরামপুরে করোনার টিকার তৃতীয় ডোজ (বুস্টার) নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। বুস্টার ডোজে আগ্রহ থাকলেও স্বাস্থ্য সহকারী ও তার শিক্ষক স্বামীর অসহযোগিতায় টিকা না নিয়ে ফিরতে হয়েছে অনেককে। আবার অনেকে টিকা পেলেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে- অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য সহকারী লতিকা রানী তা না করে নিজের শিক্ষক স্বামী প্রণব সরকারকে নিয়ে টিকা দেওয়ার কাজ করেন। প্রণব সরকারের টিকা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি টিকা নিতে আসা অধিকাংশ লোকজনকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এদিন সকাল পৌনে ১০টায় হেলাঞ্চি মোড়ে অবস্থিত খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়- টিকা নিতে আসা নারী-পুরুষের ভিড়। টিকার কার্ড দেখিয়েও বুস্টার ডোজ নিতে না পেরে বহু মানুষ কেন্দ্রের সামনের একটি কম্পিউটার দোকানে ভিড় করছেন। কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন। এ সময় তারা টিকা দিতে না পারার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
জালালপুর গ্রামের জোহর আলী বলেন- সকালে মসজিদের মাইকে টিকা দেওয়ার কথা শুনে এসেছি। টিকার কার্ড দিলেও কেন্দ্রের একজন বলেছেন, কার্ড ঠিক নেই। টিকা দেওয়া যাবে না।
একই অভিযোগ ওই গ্রামের ফিরোজা, পুষ্প রানী ও কল্পনা ঘোষসহ অনেকের।
জালালপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন- টিকার মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও ফটোকপি দিয়েছিলাম। কার্ডে ত্রুটির কথা বলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমার বাবাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শরিফুল ইসলাম বলেন- অনেক সাধারণ মানুষ গাড়ি ভাড়া দিয়ে দূরদূরান্ত থেকে এসেছিলেন। টিকার কার্ডের ত্রুটি দেখিয়ে তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে- মঙ্গলবার হাসপাতালসহ প্রতিটি ইউনিয়নের তিনটি কেন্দ্রে উপজেলার ৫১টি কেন্দ্রে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবী টিকার দায়িত্বে থাকার কথা। স্বেচ্ছাসেবীরা সম্মানীর বিনিময়ে কাজ করবেন।
সরেজমিন খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে- হাসপাতালের নিয়ম না মেনে তিনজনের পরিবর্তে শুধুমাত্র নিজের স্কুলশিক্ষক স্বামীকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়ে টিকা দেওয়ার কাজ করেন স্বাস্থ্য সহকারী লতিকা রানী। তার স্বামী প্রণব সরকার বিদ্যালয়ে না গিয়ে টিকার কার্ড পর্যবেক্ষণের কাজ করেন। কাজ না বোঝায় তিনি টিকা নিতে আসা লোকজনকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে টিকা নিতে না পেরে লোকজন ফিরে যাওয়ার খবর পেয়ে স্বাস্থ্য সহকারী মহিতোষ মণ্ডলকে ঘটনাস্থলে পাঠান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস। মহিতোষ মণ্ডল বলেন- আমি গিয়ে দেখেছি লোকজনের খুব ভিড়। লতিকার স্বামী প্রণব সরকার টিকার কার্ড দেখছেন। পরে তাঁদের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।
লতিকা রানী বলেন- আমার স্বামী টিকার কার্ড স্ক্যানের কাজ বোঝেন। তিনি স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে আমার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। কার্ডের ত্রুটি দেখিয়ে লোকজন ফেরত দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন- টিকার কাজে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের আমরা ভাতা দিই। স্বাস্থ্য সহকারীদের বলা হয়েছে, বাইরে থেকে তিনজন স্বেচ্ছাসেবী নিতে। কিন্তু নিজের পরিবারের লোক দিয়ে কেউ এ কাজ করাতে পারেন না।
ডা. তন্ময় বিশ্বাস বলেন- টিকা নিতে আসা লোকজনকে কোনোভাবে ফেরত দেওয়া যাবে না। খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা টিকা কেন্দ্রের খবর পেয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। লোকজন ফেরত দেওয়া ও নিজের স্বামীকে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে ওই স্বাস্থ্য সহকারীকে হাসপাতালে তলব করা হয়েছে।
এদিকে টিকার স্বল্পতার কারণে বুস্টার ডোজ নিতে এসে বহু মানুষ ফেরত গেছেন বলে তথ্য মিলেছে। হাসপাতাল প্রধান নিজেই টিকার স্বল্পতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ডা. তন্ময় বিশ্বাস বলেন- ঢাকা থেকে বুস্টার ডোজ আসতে দেরি হয়েছে। এ জন্য চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রে টিকা পাঠানো যায়নি। আমরা উপজেলার ৫১টি কেন্দ্রের সব কটিতে টিকার ২৫০ ডোজ করে পাঠিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৫১ কেন্দ্র থেকে মোট ১২ হাজার ২৪ জন বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।