যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পরিদর্শন

যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ শীঘ্রয়ী উদ্বোধন করা হবে। আইসিইউ এর সর্বশেষ কার্যক্রম দেখতে বৃহস্পতিবার যশোরে করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা হাসপাতালে যান। এসময় জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যাস সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়, সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের জুন মাসে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে আইসিইউ ইউনিট পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়। কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ১১ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর, হাইফ্লো নেজল ক্যানোলাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু প্যাসেন্ট মনিটর ও ইনফিউশন পাম্প সরবারহ না পাওয়ায় আইসিইউ ইউনিটের সেবা কার্যক্রম থমকে ছিল। করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন এবং হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত দেনদরবার করতে থাকেন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো সরবরাহ পাওয়ার জন্যে। সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল আইসিইউ চালু করার জন্য ২২টি উপকরণের তালিকা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র প্রেরণ করেন হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ওই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত ১৭ এপ্রিল জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এক সপ্তাহের মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ চালু করা হবে। সরকারি বরাদ্দের জন্য অপেক্ষা না করে কমিটির সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের অর্থায়নে ভেন্টিলেটর মেশিনের জন্য প্যাসেন্ট মনিটর ও ইনফিউশন পাম্প ক্রয় করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সাড়া দিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। তাদের অর্থায়নে তিনটি প্যাসেন্ট মনিটর ও ১৫টি ইনফিউশন পাম্প কিনে বুধবারই সংযোজন করা হয়েছে। আপাতত আইসিইউ ইউনিটের তিনটি শয্যায় গুরুতর অবস্থার রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া যাবে।

যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, আইসিইউ ইউনিট পরিচালনায় নেতৃত্বে রয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক ও অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার এএইচএম আহসান হাবিব। তার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন ৬ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও আগে থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া ১০জন সিনিয়র স্টাফ নার্স। আপাতত তিনটি শয্যা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল আরও ৫টি শয্যায় আইসিইউ সেবা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার ব্যবস্থা করেছেন। আগামী মে মাসের মধ্যে সেটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। চিকিৎসা নির্বিঘেœ রাখতে ৩৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট থেকেও সংযোগ নেয়া হয়েছে। সেটিও দ্রæততম সময়ের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। বর্তমান যে অবস্থা আছে তাতে গুরুতর অবস্থার রোগী শনাক্ত হওয়া মাত্রই সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসা সম্ভব হবে।

সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন জানান, করোনা সংক্রমিত রোগীদের সর্বোন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বদা তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে যশোরে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স পদায়ন করেছে সরকার।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, অন্যান্য সংকট রয়েছে, সেটাও অতিদ্রæত সমাধান হয়ে যাবে। আইসিইউ ইউনিটের চিকিৎসা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ৬জন ডাক্তার পদায়নের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে। ডাক্তার পদায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। মহামারি থেকে যশোরবাসীকে সুরক্ষা দিতে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা হচ্ছে।