রাজধানীতে খাবার পানির সংকট

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মিরপুর, উত্তরার অনেক বাসিন্দা গত কয়েকদিন ধরে খাবার পানি অভাবে ভুগছেন। এতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

এ ঘটনায় মিরপুর এলাকাবাসী ওয়াসা অফিস এবং উত্তরার আশকোনা এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ওয়াসা অফিসে লিখিতভাবে পানি সংকটের কথা জানিয়েছেন তারা। ওয়াসার কর্মকর্তারাও পানি সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন, গরমে পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া ও পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে পানি সংকট তৈরি হয়েছে।

মিরপুর-১ এর পূর্ব আহমেদ নগর, জোনাকি রোড, ব্যাংক কলোনি, বায়তুল ইকরাম মসজিদ এলাকা, মনিপুরের কিছু অংশ এবং পীরের বাগের কিছু এলাকার বাসিন্দারা গত দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র খাবার পানির সংকটে ভুগছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী লুৎফর রহমান খান জুয়েল বলেন, আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ পানি সংকটে ভুগছি। ওয়াসার পানি না থাকায় শুধু খাবার পানির সংকট নয়, গোসল, রান্নাসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। বায়তুল ইকরাম মসজিদে ১৫ দিনের বেশি ধরে পানি না থাকায় ওজু করতে মুসল্লিদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ওয়াসার বাংলা কলেজের পাশের জোন অফিসে গিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তারপরও তারা কোন সুরাহা করছে না।

স্থানীয় ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুরাদ হোসেন বলেন, বেশকিছু দিন ধরেই এলাকার মানুষ ওয়াসার পানি সংকটে ভুগছে। খুবই খারাপ অবস্থা। আগে সংকট হলে কাউন্সিলর হিসেবে আমাকে বিনামূল্যে পানি দিতো। কিন্তু এখন আমাকেও পানি দিচ্ছে না। আমাকেও ওয়াসার গাড়ির পানি কিনে খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এলাকার পানি সংকটের বিষয়টি জানিয়ে আমি ওয়াসা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারপরও এখনো পানি সংকট দূর হয়নি। ওয়াসার কর্মকর্তাদের ফোন দিলেও তারা ধরছে না।

এ বিষয়ে ওয়াসার স্থানীয় মডস জোনের-৪ নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমেদ মজুমদার বলেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় পানির চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া মিরপুর এলাকায় পাম্পের পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গরমের সময় পানির স্তরও ২/৩ মিটার নিচে নেমে যাওয়ায় পানির উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে কয়েকটি এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি।

উত্তরা এলাকার ৪৯নং ওয়ার্ডের গাওয়াইর আশকোনা এলাকায় বেশকিছুদিন ধরেই পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তীব্র পানির সংকট হওয়ায় গত ১৯ মার্চ স্থানীয় এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান এবং পানি সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানান।

স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা বলেন, আশকোনা এলাকায় বেশকিছু দিন ধরেই পানি সংকট চলছে। এমনকি আমার বাসাতেও পানি পাচ্ছি না। এলাকায় পানির নতুন লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এ কারণে সংকট দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করলে পরে ওয়াসার লোকজন এসে লাইনের চাবি ঘুরিয়ে দিয়েছে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে সমস্যা কমে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।

এ দুটি এলাকা ছাড়াও সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয় সে সব এলাকায় পানি সংকটের পাশাপাশি দুর্গন্ধও বেড়ে গেছে। এতে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা বেশ সংকটে পড়েছেন। যাত্রবাড়ি, মুগদা, মানিকনগর, বাসাবো এলাকার বাসিন্দারা গত কয়েকদিন ধরেই পানি সংকট ও দুর্গন্ধ জনিত সমস্যায় ভুগছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকটের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) একেএম সহিদ উদ্দিন বলেন, গরমের সময় পানির স্তর দুই-তিন মিটার করে নিচে নেমে যায়। এ কারণে যে পাম্পে দৈনিক আড়াই হাজার লিটার পানি উৎপাদন হতো সেখানে এখন ১৮শ’ লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে গরম বেড়েছে। এতে মানুষ বেশি পানি ব্যবহার করছে। অনেকে দিনে দুই তিনবারও গোসল করছেন। এ কারণে লাইনের শুরুর দিকের বাড়িগুলোতে পানি থাকলেও একটু দূরে যারা আছেন তাদের কাছে পানি ঠিকমত পৌছাচ্ছে না। এতে ওইসব বাড়িগুলোতে পানি সংকট হচ্ছে। তবে সংকটের খবর পেলে ওয়াসার পক্ষ থেকে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।