রাবি ক্যাম্পাসে চিরনিদ্রায় শায়িত হাসান আজিজুল হক

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও ছোট গল্পের ‘বরপুত্র’ খ্যাত হাসান আজিজুল হক তার প্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সম্মুখে তাকে সমাহিত করা হয়।

এ সময় রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন প্রাণ পুরুষকে আমরা হারালাম। তার রচিত আগুন পাখি গন্তব্যে ফিরেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

এর আগে সোমবার রাত সোয়া নয়টায় রাজশাহীর বিহাস এলাকায় নিজ বাড়িতে মারা যান প্রখ্যাত এ লেখক। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে একে একে তার স্বজন, কবি, সাহিত্যিক, ভক্তনুরাগী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা শ্রদ্ধা নি‌বেদন করেন।

তিনি মৃত্যুর সময় তিন কন্যা এবং এক পুত্র রেখে গেছেন। তার সহধর্মিণী শামসুন নাহার ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গিয়েছিলেন।

হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার যব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক এবং ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৬০ সাল থেকে তিনি কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তিনি ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবে যোগদান করেন।

হাসান আজিজুল হক তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে একুশে পদক ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

পাশাপাশি তিনি লেখক শিবির পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন।

সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৮ সালে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি লাভ করেন। ২০১২ সালে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।