রোহিঙ্গা সংকটে দিল্লিতে ৭৬টি দেশের সমর্থন চাইলো বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘে আলোচনা প্রস্তাব হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১৪ নভেম্বর। এজন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এ সপ্তাহে অন্তত ৭৬ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ওই দেশগুলোর ঢাকায় নিজেদের কোনও দূতাবাস নেই। দিল্লিতে তাদের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনাররাই ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নিজ নিজ দেশের দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

দিল্লিতে হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর ব্রিফিংয়ের মূল লক্ষ্য ছিলেন এই ‘নন রেসিডেন্ট এনভয়’রাই। রোহিঙ্গা বিষয়ক প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘে কোনও ভোটাভুটি হলে বাংলাদেশ যেন তাদের সমর্থন পেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রচেষ্টা চালানো হয়।

গত তিন দিন ধরে দফায় দফায় এসব বৈঠক শেষে শনিবার সকালে কথা বলেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তার কথায়, ‘জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনও প্রস্তাব গৃহীত হলে তা হয়তো মানতে সরাসরি তাদের বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু দেশটির ওপর যে বিপুল চাপ সৃষ্টি করা যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’

তিন দিনের এই ধারাবাহিক বৈঠকের প্রথম দিন বুধবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিলিত হন বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। যাদের ঢাকায় নিজস্ব কোনও দূতাবাস নেই। পরদিন আমন্ত্রণ জানানো হয় বিভিন্ন আফ্রিকান দেশের নন-রেসিডেন্ট এনভয়দের। আর শেষ দিনটি বরাদ্দ ছিল লাতিন আমেরিকা, মধ্য এশিয়া ও বিভিন্ন ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রের হাইকমিশনারদের জন্য।

রাষ্ট্রদূতদের কাছে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী রোহিঙ্গা সংকটের পুরো বিষয়টিই শুধু ব্যাখ্যা করেননি, একইসঙ্গে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরগুলো সরেজমিনে দেখে আসারও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মিয়ানমারকে কেন এই লাখ লাখ মানুষকে ফিরিয়ে নিতেই হবে, তাও সতীর্থ এই রাষ্ট্রদূতদের কাছে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।

এ বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে (ইউএনজিএ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পাঁচ দফা সমাধান সূত্র দিয়েছিলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলো সেইসব প্রস্তাবে ব্যাপক সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে বলে দিল্লিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

সেই সমাধান সূত্রের মূল কথা ছিল— মিয়ানমারকে তাদের দেশের লোকজনকে অবিলম্বে ও নিঃশর্তে ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

এখন জাতিসংঘের সম্ভাব্য ভোটাভুটিতে যদি এই ৭৬টি দেশের ‘মৌখিক সমর্থন’ ভোটেও রূপান্তরিত হয়, তা হবে বাংলাদেশের জন্য বিরাট এক কূটনৈতিক সাফল্য। ১৪ নভেম্বর এই প্রস্তাব জাতিসংঘে পাস করানো গেলে তা চলমান রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মোড় এনে দেবে বলেও পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক বলেছেন, ‘মিয়ানমার হয়তো এ প্রস্তাব মানতে আইনগতভাবে বাধ্য নয়। কিন্তু জাতিসংঘে এ ধরনের একটা প্রস্তাব পাস হওয়ার অর্থ কী তা সবাই জানে। সেক্ষেত্রে মিয়ানমারের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। বিশ্বব্যাংক কিংবা এক্সিম ব্যাংক, কেউই দেশটির কোনও প্রকল্পে ঋণ দিতে চাইবে না। তাই তাদের জন্য আরও সমস্যা তৈরি হবে। ফলে মিয়ানমারের পক্ষে এ ধরনের প্রস্তাব উপেক্ষা করাও মোটেই সহজ হবে না।’

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ঢাকা ও দিল্লিতে পরপর বেশ কয়েকবার জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার পর বাংলাদেশের নজর আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে।-বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।