লকডাউনে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ধস

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। লকডাউন চলাকালীন সমযে যুক্তরাজ্যে শিশু জন্মে ধস নামার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। চিকিৎসকের সঙ্গে সন্তান-সম্ভবা নারীদের দেখা করার (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) হার বেড়ে গেছে।

সংক্রমণ রোধে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো লকডাউন ঘোষিত হয়েছিল গত বছর ২৩ মার্চ। সরকার ঘোষিত এই লকডাউনের সময় স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন সব প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রগুলো ছয় সপ্তাহ বন্ধ থাকার মধ্যেও বেড়েছে গর্ভধারণের সংখ্যা।

দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) আওতাধীন মেটারনিটি বিভাগের দেয়া পরিসংখ্যান মতে, গত বছর মে মাসে সন্তান-সম্ভবা নারীদের চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সংখ্যা একটু কমে আসলেও এর পর থেকেই তা বেড়ে যেতে দেখা যায়। এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে। এতে শিশু জন্মের রেকর্ড হতে পারে বলে আশঙ্কা জানানো হয়েছে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।

গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) গর্ভবতী নারীদের তার চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সংখ্যা গেল পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল।

দেশটিতে গত বছর মে মাসে ২০১৯ সালের একই মাসের তুলনায় এমন অ্যাপয়েন্টমেন্টের হার সাড়ে দশ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫১ হাজারে। তবে এর পর থেকে আবারও অ্যাপয়েন্টমেন্টের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বরে এসে তা হয়েছিলো ৫৮ হাজারের বেশি। ২০১৫ সালের পর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অ্যাপয়েন্টমেন্টের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭৩ হাজারের বেশি। যা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

লকডাউনের মধ্যে গর্ভধারণ ও নবজাতকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন রয়েল কলেজ অফ মিডওয়াইভস-এর মহাপরিচালক বিরথ হারলেভ ল্যাম।

তিনি জানান, ‘এ মহামারি অধিকাংশ মানুষকে একটু ধীর গতির জীবনযাত্রার সঙ্গে অভ্যস্ত করে তোলে। অনেকেই বাসা থেকে অফিসের কাজ করছেন। এতে করে আরও বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন তারা। এতে করে কেউ কেউ সন্তান নেয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।’

এ প্রসঙ্গে সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির জনসংখ্যাবিষয়ক অধ্যাপক অ্যান বেরিংটন বলেন, ‘মহামারির মধ্যেও যেসব দম্পতির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল তাদের মধ্যে সন্তান নেয়ার প্রবণতা ছিল বেশি। তবে অধিকাংশ নতুন দম্পতি, যাদের চাকরির নিশ্চয়তা ছিল না, তাদের মধ্যে সন্তান নেয়ার সংখ্যা কম ছিল।’

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হতাশাজনক ঘটনার পরে অনেক সময় শিশু জন্মের সংখ্যা বেড়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একই ভাবে সন্তান-সম্ভবা নারীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।

গবেষণা সংস্থা অপিনিয়াম জানায়, লকডাউন শেষে পরের দুই বছরে যুক্তরাজ্য কমপক্ষে ২০ লাখ শিশু ভূমিষ্ঠ হতে পারে যদি ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী সব নারী সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন।