লন্ডন-ভারত সফরে বিএনপি নেতাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে

একদিকে ভারত অন্যদিকে চীন; দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে বর্তমান সরকারকে বাগে আনতে মরিয়া দেশের রাজনীতিতে কোনঠাসা বিএনপি। আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতেও মরিয়া তারা।

কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ভারত ঘুরে এসেছে। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পশ্চিমবঙ্গে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করতে গিয়ে আসন্ন নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহযোগিতা চেয়ে এসেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

একই পথ ধরে এবার বিএনপিও এগিয়ে চলেছে। একপ্রকার নিশ্চুপ-নিরবেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নির্বাচনমুখী কাজ শুরু করেছেন। দেশের ভেতরে জনমত সৃষ্টি, আওয়ামী লীগ বিরোধী দল ও জনগণ নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সহানুভূতিও চায় বিএনপি। এর আগে দলটির একটি প্রতিনিধি দল চীন সরকারের সঙ্গেও সাক্ষাত করে এসেছে। দেশের বিরাজমান নানা সংকট বিষয়ে দেশটির কাছে অবহিত করে এসেছে বিএনপি।

২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল বা ঠিক কী করেছে, তা খোলাসা না করলেও এবার কোনোভাবেই নির্বাচনের বাইরে থাকতে রাজি নয় তারা। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আগামী নির্বাচনে বিজয়ের জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুুত দলটি।

বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠন ও কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনীতি বৃদ্ধি করে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতে চায় দলটি। এবিষয়ে নেতারা আত্মবিশ্বাসীও। তারই অংশ হিসেবে দলের শীর্ষ দুই নেতা এখন দুই দেশে সফরে আছেন।

বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপি মহাসচিবকে দেশে দেখা যাচ্ছিলো না। পরে জানা যায় তিনি চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গেছেন। সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও আছেন। কিন্তু গতকাল (শনিবার) যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে একটি ইফতারের আমন্ত্রণ বার্তার মাধ্যমে জানা গেলো, ওই ইফতারে তারেক রহমানের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন।

বিএনপির একটি সূত্র থেকে জানা যায়, মহাসচিব খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচন নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জরুরি আলোচনা করবেন। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতেই মূলত মহাসচিব লন্ডনে গেছেন। যদিও এই বিষয়টি একেবারেই গোপন রাখা হয়।

অপরদিকে বিবিসিসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল এখন ভারতে। আর সেই দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সঙ্গে রয়েছেন চেয়ারপার্সনের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং দলের নির্বাসিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।

এ বিষয়টি অবশ্যই বিএনপির অনেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকারও করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে দিল্লি গেছেন বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বিএনপি নেতারা সেখানে তারা দেশটির প্রভাবশালী কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা থিংক ট্যাংকে সাবেক কূটনীতিক, অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে ভারতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মতামত জানতে এবং নিজেদের মত জানাতেই তারা এই সফরে গেছেন।

দ্য হিন্দু পত্রিকায় লেখা হয়েছে, দিল্লিতে বিএনপি নেতারা বাংলাদেশের একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের সহায়তার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাহায্য চেয়েছেন।

প্রতিনিধিদলের নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি লিখেছে, বাংলাদেশের মানুষ আশা বৃহত্তর প্রতিবেশী ভারত যেন বাংলাদেশে একটি গঠনমূলক ভূমিকা রাখে এবং নির্বাচনে একটি মাত্র দলকে সমর্থন না করে।

বিএনপির এই ভারত সফর অমূলক নয় এবং অস্বীকার করারও কোনো বিষয় নয়। কেননা, গত মাসখানেক আগে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, ভারতের কোনো প্রতিষ্ঠান বা দল যদি আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানায় আমরা অবশ্যই যাবো। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কাজেই সম্পর্ক ভালো থাকতেই পারে’।

বিএনপি নেতারা বারবার অস্বীকার করলেও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এই স্বীকারোক্তিই প্রমাণ করে ভারতের সঙ্গে বিএনপি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও ভারতের সুদৃষ্টি কামনা করছে। সেই সুদৃষ্টির আশা নিয়েই বিএনপির প্রতিনিধি দল ভারতে; এমনটাই বলছে সচেতন মহল।

সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের নানা বক্তব্যে আত্মবিশ্বাসও পাওয়া যাচ্ছে বেশ। তাদের অনেকে জোর গলায় বলছেন, আওয়ামী লীগ তার শেষ দেখতে পাচ্ছে। এই বারই আওয়ামী লীগের শেষ সময়।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছেন, ধৈর্য্য ধরুন। এমন কঠোর কর্মসূচি আসছে যে, আওয়ামী লীগের নিশ্চিত পরাজয় হবে। এবারের আন্দোলন কোনো ভদ্র মানুষের মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হবে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর আত্মবিশ্বাস আরো তুঙ্গে।

তিনি বলেছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ভোটারবিহীন বর্তমান অবৈধ-স্বৈরাচারী সরকারের ‘শেষ বাজেট’। আগামী দিনে আমরা যে বাজেটটি প্রত্যাশা করি সেই বাজেটে বর্তমান সরকারের আর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলে আমার মনে হয় না। জনগণ তাদেরকে আর সেই সুযোগ ও সেই ক্ষমতা দেবে না। আগামীদিনের বাজেটে জনগণের স্বার্থের প্রতিফলন হবে। আর সেই বাজেট দেবে দেশনেত্রী বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার। তিনি এটাও বলেন যে, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করবেন বেগম খালেদা জিয়া।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কে কূটনৈতিক দৌড়ে এগিয়ে থাকছে, তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে বেশ কিছু সময়।