শরীয়তপুরে লালনের গান লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ব্যবসায়ী কারাগারে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে এক ব্যবসায়ী (৪০) ফেসবুকে লালন সাঁইয়ের একটি গানের দুটি চরণ লিখে পোস্ট করার ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ব্যবসায়ীকে গতকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তবে আজ সোমবার দুপুরে তিনি জামিনের আবেদন জানালে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছাকাছি একটি বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী। গত শনিবার তিনি ফেসবুকে বাউল সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ এই গানের দুটি চরণের আদলে ‘সুন্নতে খাতনা দিলে যদি হয় মুসলমান/তাহলে নারী জাতির কি হয় বিধান’ লিখে পোস্ট করেন। ওই পোস্ট দেওয়ার পর এলাকায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ এনে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। অনেকে ওই ব্যবসায়ীর দোকানে ও বাড়ির কাছে জড়ো হন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ব্যবসায়ীকে রোববার ভোরে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছিল বলে অনেকে অভিযোগ তুলে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। মো. মাহবুবুল আলম, পুলিশ সুপার, শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সারা দিন থানায় রাখার পর সন্ধ্যার দিকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে আদালতে নেওয়া হয়। আদালত তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওই ব্যবসায়ীর বড় ভাই বলেন, ‘আমরা সংস্কৃতিমনা শিক্ষিত পরিবার। এলাকায় আমাদের পরিবারের সুনাম রয়েছে। সব সময় এলাকায় আমরা অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা ধারণ করে চলাফেরা করি। এলাকার অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও আমাদের স্নেহ করেন, ভালোবাসেন।

আমার ভাই একটি গানের কলি লিখে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এমন হবে, তা বুঝতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত, শঙ্কিত ও বিচলিত হয়ে পড়েছি। ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বা তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমরা আদালতে তার জামিনের আবেদন করেছি।’

শরীয়তপুর জজকোর্টের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান, আজ দুপুরে ভেদরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক সাকিব হাসান ওই ব্যবসায়ীর জামিন মঞ্জুর করেছেন।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, এক ব্যবসায়ী একটি গানের দুটি লাইন লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছিল বলে অনেকে অভিযোগ তুলে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। ওই ব্যবসায়ীকে প্রথমে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। এরপর কোনো কিছু ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমরা পুরো ঘটনা সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করছি। এটা নিয়ে যাতে কেউ কোনো ধরনের খারাপ কিছু না করতে পারেন, তার ওপরও নজর রাখা হয়েছে।’