শেখ হাসিনার অলঙ্কারে বিয়ে হয়েছিল বীরাঙ্গনাদের

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার নারীদেরকে বিয়ে দিতে শেখ হাসিনা তার সব অলঙ্কার দান করে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর এই দানকে তিনি তার কর্তব্য ভেবেছিলেন বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

৪০ মিনিটেরও বেশি দীর্ঘ বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নারী জাগরণের বিষয়টি তুলে ধরেন, জানান মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে পরিস্থিতি কেমন ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যার পাশাপাশি বেপরোয়া ধর্ষণ চালায়। সাড়ে তিন লাখেরও বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয় নয় মাসে।

যুদ্ধ শেষে এই নারীদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা এবং সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনাটা সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল বলেও জানান শেখ হাসিনা। আর এর অংশ হিসেবেই তাদের বিয়ে দেয়া হয়। আর এই বিয়ের উপহার হিসেবেই নিজের গয়না দিয়ে দেন বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সমস্ত গহনা আমি লকার থেকে বের করে মাকে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তুমি তাদেরকে দিয়ে দাও। এটা আমার কর্তব্য বলে আমি মনে করি। সেভাবেই আমরা সহযোগিতা করেছি তাদেরকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ছেলে এগিয়ে এসেছিল সাহসের সাথে। সেই ছেলেদের পুনর্বাসন, চাকরির ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’

বিয়ে দেয়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাবা এবং শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে মা হিসেবে কাবিন নামায় পরিচয় দিতে হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘অনেক বাবা, মা অভিভাবক নিতে চায়নি। বিয়ের দেয়ার সময় কাবিনে লিখতে হয় বাবার পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা। আমার বাবা বলে দিয়েছিলেন, লিখে রাখ তাদের বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, বাড়ির ঠিকানা ৩২ নম্বর (ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি)। এবং আমার মা দাঁড়িয়ে থেকে এই নাম দিয়ে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন।’

‘তাদের এই পুনর্বাসনের পর কেউ যেন তাদেরকে অপমান করতে না পারে, সে ব্যবস্থাটাও তিনি (বঙ্গবন্ধু) করে দিয়েছিলেন। তাদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধি দেয়া হয়েছিল যাতে সমাজ তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখে।’

‘তাদের যে আত্মত্যাগ, সে আত্মত্যাগের মর্যাদা জাতির পিতা তাদেরকে দিয়ে গিয়েছিলেন।..আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদেরকে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েছি।’