সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কুরবানী

হযরত মাওলানা মুহম্মদ আবুল বাশারঃ সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুদ শরীফ ও সালাম।

সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে উনার আওলাদ হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার ও কাবীলের কুরবানীর পর থেকে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত কুরবানী চলতে থাকে। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ৮৬ বছর বয়স মুবারক-এ মহান রব তায়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সৎকর্মশীল আওলাদের জন্য দুআ করেন। ফলে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে একজন ধৈর্যশীল আওলাদের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন অর্থাৎ: “(হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু’আ করলেন) হে আমার প্রতিপালক!

আপনি আমাকে একজন সৎকর্মশীল আওলাদ দান করুন। অতঃপর আমি উনাকে একজন অতি ধৈর্যশীল আওলাদের সুসংবাদ দিলাম।” (পবিত্র সূরা আছ-ছফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০-১০১)সুসংবাদটি ছিল হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে, কেননা তিনি ছিলেন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রথম আওলাদ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/১৫৭-১৫৮)অতঃপর যখন হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে হাঁটার মত বয়স মুবারকে উপনীত হলেন অর্থাৎ নিজেই নিজের দেখাশোনা করতে পারতেন।

এ রকম একটা অবস্থা যখন আসল, তখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র ৭-৯ যিলহজ্জ শরীফ পর পর ৩ দিন স্বপ্ন মুবারক দেখলেন যে, উনাকে উনার প্রিয় বিষয় কুরবানী করার আদেশ মুবারক দেয়া হচ্ছে ।মুখতালিফ রেওয়ায়েত, এক বর্ণনায় রয়েছে, স্বপ্ন মুবারক দেখার পর তিনি প্রত্যেক দিনই ১০০টি করে উট কুরবানী মুবারক করেন। আরেক বর্ণনায় রয়েছে, প্রথম দিন অর্থাৎ ৭ তারিখে ১০০টি মেষ বা দুম্বা, ৮ তারিখে অর্থাৎ ইয়াওমুত তারবিয়া বা চিন্তার দিবসে ১০০টি গরু ও ৯ তারিখে অর্থাৎ ইয়াওমুল আরাফাহ ১০০টি উট কুরবানী মুবারক করেন।

কিন্তু ১০ তারিখে অর্থাৎ ইয়াওমুন নহর হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার প্রাণপ্রিয় আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী করার জন্য স্বপ্নযোগে স্পষ্টরূপে আদিষ্ট হলেন।মূলত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্ন মুবারক হচ্ছে ওহী মুবারক। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রিয় আওলাদ হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী করার আদেশের মাধ্যমে মূলত সকল উম্মতের জন্য পরীক্ষার মানদণ্ড স্থাপন করলেন।

যেই আওলাদ উনাকে তিনি বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছিলেন এবং শিশু অবস্থায় উনার সম্মানিতা মাতা এবং উনাকে জনমানবহীন মরুভূমিতে রেখে আসার আদেশ পেয়ে উনাদেরকে সেখানে রেখে আসলেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের জন্য অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিযিক পাঠালেন। এত কিছুর পরেও উনার ঘরে প্রথম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকারী আওলাদ উনাকে কুরবানী করার জন্য যখন আদেশ মুবারক করা হলো, তখন তিনি তা করতে উদ্যত হলেন। তিনি উনার প্রিয় আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম যিনি একজন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন- ‘হে আমার আওলাদ!

আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কুরবানী করছি। এতে আপনি কি মনে করেন!’ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাথে সাথেই জবাব দিলেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ মুবারক করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সবচেয়ে উত্তম জবাব দিলেন, এটাই ছিল উনার সম্মানিত পিতা উনার প্রতি এবং উনার মহান রব তায়ালা উনার প্রতি আনুগত্যের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

তারপর উনারা উভয়ে নিজেদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করলেন, এবং হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাত করে শোয়ালেন। অতঃপর “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি চালালেন।হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যতই ছুরি চালাতে থাকেন; মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত। হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কিন্তু কাটছে না। সুবহানাল্লাহ! হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছুরির ধার পরীক্ষা করার জন্য ছুরিটি একটি পাথরে আঘাত করলেন। সাথে সাথে পাথরটি দ্বিখন্ডিত হয়ে গেলো। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ছুরি! তুমি পাথরকে বিখণ্ডিত করে দিলে অথচ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটতে পারছো না? মহান আল্লাহ পাক তিনি ছুরির যবান খুলে দেন। ছুরি বললো, ‘হে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম!

আপনি একবার কাটার জন্য আদেশ করেন আর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ৭০ বার কাটতে নিষেধ করছেন। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে অবস্থান মুবারক করছেন। ” কোন কিছুর পক্ষে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটা সম্ভব নয়। তাই আমার পক্ষে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটা সম্ভব হয়নি। সুবহানাল্লাহ!
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক ও হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার চুরি মুবারক উনার মাঝখানে একটি তামার পাত কুদরতীভাবে রেখে দিয়েছিলেন। যার ফলে গলা মুবারক কাটা যায়নি।

হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যবেহ করার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন ঠিক এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা এনে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট দেয়ার নির্দেশ দিলেন।হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি যখন দুম্বা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন দেখলেন, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক-এ ছুরি চালাচ্ছেন।হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার বড়ত্ব, মহত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বলে উঠলেন -আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, মিন কুল্লি শাইয়্যিন’। একথা বলে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সরিয়ে ছুরির নিচে দুঘাটি দিয়ে নিলেন।

হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে তখন তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার একত্বতার ঘোষণা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার মিন কুল্লি শাইয়্যিন’। এদিকে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও যখন বুঝতে পারলেন যে, তিনি যবেহ না হয়ে উনার পরিবর্তে একটি দুম্বা যবেহ হচ্ছে তিনিও তখন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদু মিন কুল্লি শাইয়্যিন’। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এটিই তাকবীরে তাশরীক নামে মশহুর। তাকবীরে তাশরীক পাঠ করার শরয়ী বিধানঃপবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর উচ্চারণঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু শুয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহ্ আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”এই পবিত্র তাকবীর মুবারক পাঠ করতে হয়।

উক্ত পবিত্র তাকবীর মুবারক খানাকেই পবিত্র ‘তাকবীরে তাশরীক’ বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে পুরুষ-মহিলা প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।দুররুল মুখতার” কিভাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফ্যীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে অর্থ। “কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশরীক) তিনবার।” “পায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছওয়াবের অধিকারী হবে ”
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব। (শামী, আইনী আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার)
এই সময়ের মধ্যে কেউ যদি পূর্বের (ফরয) কাযা নামায আদায় করে তাহলে উক্ত নামাযের পর তাকে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হবে না।

তবে আল্লাহ পাক না করুন কারো যদি এ সময়ের মধ্যে নামায ক্বাযা হয় আর উক্ত ক্বাযা নামায় ১৩ যিলহজ্জ শরীফ উনার মধ্যে আদায় করা হয় তবে উক্ত ক্বাযা নামায আদায়ের পর প্রতি ওয়াক্তের জন্য তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হবে। তাছাড়া উক্ত ২৩ ওয়াক্ত নামাযে তাকবীরে তাশরীক পড়তে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়া মাত্রই তা পাঠ করতে হবে।

মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে অবস্থান করার কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক না কাটার জন্য ছুরিকে ৭০ বার আদেশ মুবারক করেন। হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবর্তে মহান আল্লাহ পাক তিনি বেহেশত হতে একটি দুম্বা কুরবানী হিসেবে কবুল করেন। উক্ত দুম্বাটি সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে।

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ-এ (অর্থাৎ আমি এক মহান কুরবানী উনার বিনিময়ে আপনার আওলাদ উনাকে ছাড়িয়ে নিলাম) উনার ব্যাখ্যায় বলেন যে দুম্বাটি জান্নাতে ৪০ বছর বিচরণ করেছিল।” (তাফসীরে দুররে মানভূর শরীফ ১২তম খণ্ড ৪৫০ পৃষ্ঠা, ফতহুল কাদীর ৬ষ্ঠ খণ্ড ২১৪ পৃষ্ঠা)
অন্য বর্ণনায় রয়েছেঅর্থ : “তরুতাজা, সুদর্শন, শিংওয়ালা দুম্বা যা জান্নাতে ৪০ বছর বিচরণ করেছিল।”আরো বর্ণনায় রয়েছে
অর্থ : “যেটা একটা তরুতাজা, সুদর্শন, শিংওয়ালা দুম্বা ছিল যেটা জান্নাতে ৪০ বছর বিচরণ করেছিল অতঃপর হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেটা গ্রহণ করলেন এবং যবেহ করলেন।”

(তাফসীরে বাগবী শরীফ ৭ম খন্ড ৫০ পৃষ্ঠা, তাফসীরে কবীর শরীফ ২৬তম খণ্ড ৩৫১ পৃষ্ঠা)অর্থাৎ হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার প্রিয়তম আওলাদ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবর্তে যে দুম্বাটি কুরবানী করেছিলেন উক্ত দুম্বাটি আখিরাতের হিসেবে ৪০ বছর জান্নাতে বিচরণ করেছিল। সুবহানাল্লাহ! উক্ত কুরবানী সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন অর্থ : “অতঃপর তিনি (হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) যখন উনার সম্মানিত পিতা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে চলাফিরা করার বয়স মুবারক-এ পৌঁছলেন, তখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি। বললেন, হে আমার সম্মানিত আওলাদ! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ করছি, এখন বলুন, আপনার অভিমত কী? হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। দু’জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিলেন আর হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাত করে শুইয়ে দিলেন। তখন আমি উনাকে জানিয়ে দিলাম, ‘হে খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম!

স্বপ্নে দেয়া আদেশ মুবারক আপনি সত্যে পরিণত করেছেন। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবানী উনার বিনিময়ে আপনার আওলাদ উনাকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর আমি উনাকে পরবর্তীদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখলাম। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক! সৎকর্মশীলদেরকে আমি এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত।” (পবিত্র সূরা আছ-ছফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০-১১১) হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনিই যবীহুল্লাহঃতাফসীরে মাযহারী’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, “এ কথা সুনিশ্চিত যে,

পবিত্র সূরা ছফাত শরীফ উনার ১০১নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উদ্ধৃত • অর্থঃ ‘ধৈর্যশীল পুত্র’ বলে বুঝানো হয়েছে-হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে। আর উনাকেই পবিত্র কুরবানী করার নির্দেশ মুবারক পেয়েছিলেন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি। অর্থাৎ তিনিই ছিলেন ‘যবীহ’ (কুরবানীকৃত)। কিন্তু ইহুদী, খ্রিস্টানরা বলে, ‘যবীহ’ ছিলেন হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এ উক্তি যে অসত্য, তা বলাই বাহুল্য।

মূলত হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কিত যে বর্ণনা রয়েছে তা ইসরাইলী বা ইহুদীদের বর্ণনা। ইহুদীরা হিংসার বশবর্তী হয়েই এরূপ মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে ও করছে। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইহুদীরা জানত যে, আরবভূমিতে একজন নবী আসছেন এবং উনার জন্য রীতিমত তারা অপেক্ষা করেছিল।

আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমি দুই যবীহ (কুরবানীকৃত) অর্থাৎ হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদের আওলাদ।’ সুবহানাল্লাহ! অন্যত্র হযরত আবদ ইবনে হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ফরাজদাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে-

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মিম্বর মুবারক উনার উপর বসে খুৎবাতে বলেন,হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাকেই যবেহ করার নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছিল।”মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেনঅর্থ : “আমি নেককার উনাদেরকে এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত। আমি উনাকে সুসংবাদ দিয়েছি হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম উনার, যিনি নেককার উনাদের মধ্য থেকে একজন নবী।” (পবিত্র সূরা আছ-ছফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১০-১১২)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী হিসেবে কবুল করার পর প্রতিদান স্বরূপ হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দ্বিতীয় পুত্র হিসেবে হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ প্রদান করেন। তাহলে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম তিনি যবীহুল্লাহ? মূলত হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনিই যবীহুল্লাহ।(সুবহানাল্লাহ) অতএব রাজারবাগ শরীফের হযরত মুজাদ্দিদে আযম মুরশিদ কিবলা আলাইহিস উনার উসিলায় আমাদেরকে সম্মানিত পবিত্র কুরবানী দিয়ে ফজিলত হাসিল করার তাওফিক দান করুন।