সাতক্ষীরার তালায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছে ওয়াশ প্রকল্প

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তিন ইউনিয়নের ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ তথা পানি, পায়খানা, হাতধোয়া ও পরিস্কার পরিচ্ছনানতাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে উত্তরণের ওয়াশ প্রকল্প।
প্রকল্পের আওতায় ছাত্রীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ন্যাপকিন কর্ণার তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া স্কুল ক্যাম্পেইন, শিক্ষকদের সাথে ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের পাশাপাশি স্কুল পাশর্^বর্তী ৬৬ টি গ্রামের ১৫ হাজার ৮শত পরিবারকে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে সংস্থাটি।

উত্তরণের ওয়াই ওয়াশ (নিউ এরিয়া ওয়াশ এসডিজি ওয়াই এসপি বাংলাদেশ) প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন জানান, তালা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শত শত মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সংকটে ভুগছে। উপজেলার খলিষখালী ইউনিয়নের ৩২ গ্রামের ৬২০০ পরিবার, জালালপুরের ১৩টি গ্রামের ৫৪০০ পরিবার এবং নগরঘাটা ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের ৪২০০ পরিবার মিলে মোট ৩ ইউনিয়নের ৬৬ গ্রামের ১৫ হাজার ৮০০ পরিবার এখনো নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত। অনেকেই পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, চুলকানি, পাচড়া, উচ্চ রক্তচাপ, হাপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

উক্ত সমস্যা সমাধানে এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে উত্তরণ। এছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় তিন ইউনিয়নের ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩১৫০ জন শিক্ষার্থীকে ওয়াশ তথা পানি, পায়খানা, হাতধোয়া ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন করা হচ্চে। স্কুলগুলোর ছাত্রীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কর্ণার তৈরি করা হয়েছে ন্যাপকিন। এতে ১৬৮৮ জন ছাত্রীর মাসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত হচ্ছে। এছাড়া উক্ত প্রকল্পের আওতায় স্কুল ক্যাম্পেইন, শিক্ষকদের সাথে ম্যানেজিং কমিটির মিটিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

খলিষখালী শৈব বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সোনালী দে, নবম শ্রেণির রিফাত ইয়াসমিন রিয়া, অষ্টম শ্রেণির চৈতি মÐল, সপ্তম শ্রেণির সাদিয়া খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, স্কুলে কিছু কিছু সময় আসতে তারা সংকোচবোধ করতো। বর্তমানে উত্তরণের ওয়াশ প্রল্পের সহায়তায় বিদ্যালয়ে তৈরি করা ন্যাপকিন কর্ণার তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি স্কুলে আসতে আগ্রহ সৃষ্টি করে তুলেছে।

খলিষখালী শৈব বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণী দে জানান, উত্তরণের ওয়াশ প্রকল্পের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ে স্কুল ক্যাম্পেইন, শিক্ষকদের সাথে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং এবং পানি, পায়খানা, হাতধোয়া ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সভা করে থাকে। বিশেষ করে ছাত্রীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে ন্যাপকিন কর্ণার।

তিনি বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের পাশাপাশি হাত ধোয়ার জায়গায় সাবান রাখা ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে প্রচারপত্র বিলি করে থাকে সংস্থার কর্মীরা।

এ ব্যাপারে জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, স্কুলের ছাত্রীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ন্যাপকিন কর্ণার তৈরি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এছাড়া স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, হাতধোয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যে সভা করে থাকে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ন।

তিনি আরও বলেন, এলাকায় খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনের পাশাপাশি আর্সেনিকের সমস্যা প্রকট। ভয়াবহ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অত্র এলাকার কৃষ্ণকাটী গ্রামের একই পরিবারের ৪ জনেরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, ছাত্রীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ন্যাপকিন কর্ণার সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এতে ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার কমেছে এবং তাদের মধ্যে সংকোচ দূর হচ্ছে। এছাড়া লোখাপড়ার মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি।

তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান জানান, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আগের চেয়ে বর্তমানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের হারও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব সরদার জানান, বিভিন্ন হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ওয়াশ তথা পানি, পায়খানা, হাতধোয়া ও পরিস্কার পরিচ্ছনানতাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে উত্তরণের ওয়াশ প্রকল্প।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় ছাত্রীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ন্যাপকিন কর্ণার তৈরি ভাল উদ্যোগ বলে মনে করেন তিনি।