সাভারে গৃহকর্মীকে বেধে নির্যাতনের অভিযোগ

সাভারে বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতন ও চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক গৃহকর্মী।

ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের অভিযোগ, কাজ করার সময় তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে বাড়ির মালিক।
এরপর মালিকের স্ত্রী এসে দেখে ফেলায় তাকে আটকে রেখে বেধরক পেটানো হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী শোভা রানীর শরীরে জখমের চিহ্ন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।

এর আগে মঙ্গলবার আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার সোনিয়া মার্কেটের মালিকের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শোভা রানী।

ভুক্তভোগী শোভা রানী গাইবান্ধা জেলার সদর থানার কূপতলা গ্রামের আনিছুর রহমানের স্ত্রী। আনিছুর পেশায় রিকশাচালক ও তার স্ত্রী শোভা দিনমজুরের কাজ করেন। মাঝে মধ্যে মানুষের বাসাতেও কাজে যান। তাদের একটি মেয়ে সন্তান আছে।

অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী লিপি বেগম আশুলিয়ার গাজীরচট সোনিয়া মার্কেট এলাকার বাসিন্দা।

নির্যাতিতা শোভা রানী আওয়ার নিউজকে বলেন, গত পরশুদিন (মঙ্গলবার) দুপুরে গাজীরচট সোনিয়া মার্কেটের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী তাদের বাড়িতে কাজ করার জন্য তাকে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়ির ফ্লোর মোছার সময় বাড়ির মালিক দেলোয়ার ছাড়া তখন কেউ ছিলো না। ওই সময় দেলোয়ার তাকে জোরপূর্বক মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। ঘটনার সময় সেখানে বাড়ির মালিকের স্ত্রী দেখে ফেললে উল্টো শোভাকে মারধোর শরুকরে। শোভার কোন কথাই শোনেনি মালিকের স্ত্রী লিপি। পরে লিপি ও তার দেবড়ের স্ত্রী তাকে ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আটকে রেখে লাঠি দিয়ে তাকে বেধরক পিটিয়ে জখম করে। প্রথমে কেঁচি দিয়ে মাথার চুল কাটে। পরে ব্লেড দিয়ে মাথা চেছে দেয়।
এরপর বাড়ির মালিকদেরই এক স্বজন তাকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে বাড়িতে পাঠায়৷ এসময় তিনি ২৫০০ টাকা চিকিৎসার জন্য দিলে তাও কেড়ে নেন বাড়ির মালিকের স্ত্রী লিপি।ঘটনার দিন রাতে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে আটক না করেই চলে আসে। পরদিন সকালে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তিনি।

ভুক্তভোগীর স্বামী আনিছুর রহমান বলেন, ‘পরশুদিন আমার বউকে ওরা কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে গেছে। তখন বাড়িয়ালি বাড়িতে ছিলনা। সেইসময় আমার স্ত্রীকে বাড়ির মালিক দেলোয়ার জোর পূর্বক ধর্ষন চেষ্টা করে। পরে বাড়িওয়ালার বউ’ আমার বউকে বেধে রেখে সন্ধ্যা ৭টায় ছেড়ে দেয়।

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা বলেন, শোভা রানী নামে ওই নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে তাকে ওয়ার্ডে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে গাজীরচট সোনিয়া মার্কেট এলাকায় মালিক দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে।

তবে মুঠোফোনে দেলোয়ার হোসেন আওয়ার নিউজকে বলেন, ‘পরশুদিন এক মহিলা কাজ করতে আসছিল। আমি তখন নিচে ছিলাম। কিন্তু আমরা বউ আমাকে সন্দেহ করে। কাজের মহিলাকে অযথা মারধর করেছে। পরে গতকাল দুপুরে দারোগা ইউনুছ আসছিলো। ওই মহিলাকে চিকিৎসার জন্য ৮হাজার টাকা দিছি।
তবে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন দেলোয়ার।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউনুছ আলী বলেন, ‘পরশু দিন ওই গৃহকর্মী বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। আমি কয়েকবার গিয়ে বাড়ির মালিককে পাই নাই। সে বাসায় ছিলো না।
ভুক্তভোগী কোন ধর্ষণের অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি।

তবে টাকা দিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেছেন কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি অস্বীকার করেন।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) তদন্ত ধর্ষনের মামলা হয়েছে ও দেলোয়ার সহ ৩ জনকে আটক করেছে বলে জানান।