সিলেটে ছোট মনি নিবাসে শিশু হত্যার দায়ে আয়া কারাগারে, প্রশাসন ও স্থানীয়দের কঠোর দৃষ্টি

অনাত শিশুর ঠাই সিলেট ছোটমনি নিবাসে। যা পরিচালানা করে থাকে সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর। ছোটমনি নিবাসে দুই মাস ১১ দিন বয়সী শিশু নাবিল আহমদ মৃত্যুর পর প্রশাসন নড়ে চড়ে জেগে উঠে। তদন্ত চলতে থাকে চুলচেরা বিশ্লেষন। অবশেষে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল।
নাবিল হত্যায় গ্রেফতার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা কে।

গ্রেপ্তারের পর গত ১৪ আগস্ট (শনিবার) সন্ধ্যায় সিলেট মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম (৩য়) সাইফুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দি রেকর্ডের পর আদালতের বিচারকের নির্দেশে আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে সে এখন করাগারে দিনক্ষন কটাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার আয়া সুলতানা ফেরদৌসীকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দুটোর জন্য পুলিশ আদালতে আবেদন করে। তবে আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়াতে রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন হয়নি।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সুলতানা জানিয়েছেন, শিশুটি অতিরিক্ত কান্নাকাটি করায় সে বিরক্ত হয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এজন্য আয়া সুলতানা নিজের এমন নিষ্ঠুরতার জন্য অনুতপ্ত বলেও পুলিশকে জানিয়েছে।

শুক্রবার (১৩ আগষ্ট) সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও অপমৃত্যু মামলার নং (৪৫) তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপর ওই মামলায় আয়া সুলতানাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তারও আগে বৃহস্পতিবার রাতে নগরের বাগবাড়িস্থ সিলেট ছোটমনি নিবাস থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুলাই রাত ১১টার দিকে ছোটমনি নিবাসে শিশু নাবিল কান্নাকাটি করছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দায়িত্বে থাকা আয়া সুলতানা। এ সময় তিনি বিরক্ত হয়ে নাবিলকে বিছানা থেকে তুলে সজোরে আছাড় মারেন। খাটের স্টিলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় শিশুটি। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তার মুখে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে আয়া সুলতানা।

এ ঘটনায় ২৪ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (নম্বর-৪৫) দায়ের করা হয়।

ময়নাতদন্তের পর নাবিলের মরদেহ দাফন করা হয়।

নাবিল হত্যার বিষয়টি আর আড়ালেই থেকে যায়।

১২ আগস্ট রাতে কোতোয়ালি থানা পরিদর্শনে আসেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। এসময় শিশু নাবিলের অপমৃত্যু মামলাটি তার দৃষ্টিতে আসে। বিষয়টি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রাত ১১টায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহবুবসহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে বাগবাড়ির ছোটমনি নিবাসে ছুটে যান ডিসি আজবাহার আলী শেখ।

সেখানের সিসি ক্যামেরায় শিশু নাবিল খুনের পুরো ঘটনাটি রেকর্ড হয়েছিল। ক্যামেরায় ধারণ হয় সুলতানা কীভাবে নাবিলকে ছুঁড়ে ফেলে এবং বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন।
সিসি ফুঁটেজ দেখে আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে তাৎক্ষণিক ভাবে আটক করার নির্দেশ দেন আজবাহার আলী শেখ। পরে সুলতানাকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক ভাবে নাবিলকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন সুলতানা।

তবে এ ঘটনার পর থেকে সিলেটের স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছেন নিয়মিত দেখভালও করছেন। এছাড়া সিলেটে বিত্তশালী ও প্রবাসী সহ স্থানীয় পর্যায়ের সর্বদলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত মিনিটর করছেন বলে জানা গেছে।