হজের প্রাথমিক প্রস্তুতিতে করণীয় কাজ

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৪৩৮ হিজরি মোতাবেক ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট যাত্রা শুরু করবে আগামী ২৪ জুলাই। বাংলাদেশ বিমান ও ধর্মমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য সবার জানা।

চলতি বছর যারা পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লায় গমন করবেন তাদের প্রতি রইলো শুভ কামনা ও মোবারকবাদ। বাইতুল্লায় গমনকারীরা হলেন আল্লাহ তাআলার মেহমান।

তাই হজে গমনের আগেই হজ পালনেচ্ছুদের দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে প্রাথমিকভাবে নিজেদের তৈরি করে নেয়া জরুরি। হজের আগেই বাইতুল্লায় গমনকারীদের জন্য মৌলিক কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ রয়েছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে হজের সফরে যার সামানা বা মালামাল কম হবে ওই ব্যক্তির হজের সফর হবে সুন্দর এবং কষ্টহীন।

হজে গমণের আগে করণীয়

>> হজে গমনকারী ব্যক্তি ঋনগ্রস্ত হলে হজে গমণের আগেই ঋণ পরিশোধ করা।
>> প্রতিবেশীসহ নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে দায়-দাবি মুক্ত হওয়া।
>> হজে গমনকারী ব্যক্তির কোনো অসিয়ত থাকলে তা লিখিত আকারে তৈরি করে রাখা।
>> দুনিয়াবী সব ধরনের সমস্যা থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হওয়া।

হজে আগে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কেনাকাটা

>> বৈধ অর্থের উৎস থেকেই হজ্বের সব ধরনের খরচ আঞ্জামের ব্যবস্থা করা।
>> হালকা এবং মোলায়েম ইহরামের পোশাক ক্রয় করা; (২/৩ সেট)
>> কোমরবন্দ (বেল্ট) সংগ্রহ করা; যাতে থাকবে পাসপোর্ট ও টাকার রাখার জন্য নিরাপদ পকেট।
>> জুতা রাখার কাপড়ের ব্যাগ এবং পিঠে হালকা কাপড় বহনের ব্যাগ সংগ্রহ করা।
>> হজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরবরাহকৃত লাগেজ চেক করা। ত্রুটি থাকলে তা মেরামত করে নেয়া।

হজের ইবাদতে নিজেকে প্রস্তুত করতে

>> হজের তালবিয়া সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে মুখস্ত করে নেয়া।
>> বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে আত্মা বা দিলকে আল্লাহর প্রেমের উপযোগী করে তোলা।
>> হজ ও ওমরার রুকন তথা ইহরাম, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাঈ’র দোয়া ও নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে শিখে নেয়া।

>> গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমল এখন থেকেই শিখতে থাকা।

মনে রাখতে হবে-

হজে গমনের প্রস্তুতির অর্থ হলো- সেলাইবিহীন ইহরামের সাদা কাপড় পরিধান করে পরকালীন জীবনে গমনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কারণ বাইতুল্লায় হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা-ই হতে পারে একজন আল্লাহ প্রেমিকের জীবনের শেষ যাত্রার প্রস্তুতি।

হজের আগেই যা বর্জন করা জরুরি

>> দুনিয়ার সব ধরনের মোহ, লোভ-লালসা, তথা জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার সব মানসিকতা ত্যাগ করা।
>> সব ধরনের পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
>> হজে গমনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমকে জীবনের শেষ প্রস্তুতি মনে করে দুনিয়ার ভালোবাসা ত্যাগ করা।
>> আভিজাত্য, পদমর্যাদা, বংশ-গৌরব, গর্ব ও অহংকার ত্যাগ ও দুনিয়াবী ক্ষমতার মানসিকতা ত্যাগ করা।
>> হজের যে কোনো কাজেই তাড়াহুড়া, পেরেশানি ও উদাসিনতাভাব ত্যাগ করা।
>> দুনিয়াবী সব ধরনের অন্যায় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা।
>> হজের সফলে কেউ কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে বা হজ এজেন্সি কোনো কাজ করে দেবে এ মানসিকতা ত্যাগ করা।
>> হজের সফরের লাগেজ সংগ্রহ, নাস্তা ও খাবার সংগ্রহ, কাপড়-চোপড় ধোয়া ও আয়রন করা ইত্যাদি কাজ নিজেই করতে হবে এ প্রস্তুতি নেয়া।

একটা কথা মনে রাখতে হবে-
হজের সফরে কোনো ধরনের বেহুদা কথা বার্তা ও ঝগড়া-ঝাটি ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে যাওয়া। সব ক্ষেত্রে ত্যাগ ও ধৈর্যের মানসিকতা তৈরি করা।

পরিশেষে..
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ইসমাইল আলাহিস সালামের স্মৃতি বিজড়িত হজের কার্যক্রম এবং আত্ম বিসর্জনের যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে সে সব বিধি-বিধান পালন করে হজের সফরকে সফল করতে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ হজ পালনেচ্ছু সব হাজিদেরকে হজ্বের প্রাক-প্রস্তুতি নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন