৩-০ গোলে রিয়ালকে হারাল বার্সেলোনা

এল ক্ল্যাসিকো কেমন চান আপনি? নিশ্চিত জবাব আসবে, টান টান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ একটি ম্যাচ! সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এল ক্ল্যাসিকো ম্যাচটি ছিল সব কিছুতেই পরিপূর্ণ। আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ যেমন ছিল, তেমনি ছিল টান টান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। ছিল লাল কার্ড এবং বার্সেলোনার দুই সেরা তারকা লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের গোল। যদিও রিয়াল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও গোল করেছিলেন; কিন্তু অফসাইডের অজুহাতে তার গোলটিকে আর বৈধতা দিল না রেফারি। শেষ পর্যন্ত বার্নাব্যু থেকে ৩-০ গোলের জয় নিয়েই ঘরে ফিরেছে চির প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা।

এমনিতেই লা লিগায় এবার অনেক আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে আছে বার্সেলোনা। কারণ, রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে যে এল ক্ল্যাসিকো শুরুর আগেই ১১ পয়েন্ট এগিয়েছিল বার্সা! দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের চেয়ে এগিয়ে ৬ পয়েন্ট। তবুও এল ক্ল্যাসিকো মানেই ভিন্ন আকর্ষণ নিয়ে হাজির হওয় অন্যরকম একটি ম্যাচ। সারা বিশ্বের সেরা ফুটবল ম্যাচ হিসেবে যাকে গণ্য করা হয়। নানাদিক থেকেই কেন যেন এই ম্যাচটিকে ধরা হচ্ছিল সময়ের সেরা ফুটবল ম্যাচ হিসেবে।

সবারই ধারণা ছিল, ঘরের মাঠে এই ম্যাচে বার্সেলোনাকে হারিয়ে লা লিগার রেসে ফিরে আসবে রিয়াল মাদ্রিদ; কিন্তু তা আর হলো কই! চির প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছে ৩-০ গোলে হেরে যে লিগ জয়ের দৌড় থেকে আরও অনেক দুরে ছিটকে পড়েছে জিনেদিন জিদানের দল!

দুই দলের পয়েন্টের ব্যবধান দাঁড়িয়ে গেছে ১৪ পয়েন্ট। ১৭ ম্যাচ শেষে বার্সার পয়েন্ট এখন ৪৫। আর ১৬ ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট থাকল আগের সেই ৩১’ই। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকোর সঙ্গে বার্সার ব্যবধান দাঁড়াল ৯ পয়েন্টের।

এল ক্ল্যাসিকো মহারণের প্রথমার্ধে কেউ কারও জালে বল প্রবেশ করাতে পারেনি; কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার পরই রিয়াল মাদ্রিদকে পেছনে ফেললো লিওনেল মেসির বার্সেলোনা। ১০ মিনিটের ব্যবধানে রোনালদোর ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের জালে ২ বার বল জড়িয়ে দিয়েছে বার্সা। যার একটি এসেছে লুইস সুয়ারেজের পা থেকে। অন্যটি এসেছে মেসির পা থেকে, পেনাল্টি কিকের মাধ্যমে। খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে (৯০+৩ মিনিটে) লিওনেল মেসির দুর্দান্ত এক পাস থেকে বল পেয়ে রিয়াল মাদ্রিদের জালে তৃতীয়বারেরমত বল জড়িয়ে দেন আলেক্সি ভিদাল।

খেলার দ্বিতীয় মিনিটেই দারুণ একটি সুযোগ মিস করে ফেলেন রাফায়েল ভারানে। টনি ক্রুসের নেয়া কর্ণার কিক থেকে ভেসে আসা বলে বাম প্রান্ত থেকে তার দারুণ এক হেড নিয়েছিলেন ভারানে। কিন্তু সেই বল পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটেই গোল দিয়ে বসেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ঘরের মাঠে দুর্দান্ত শুরুর এক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সিআর সেভেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে মুহূর্তে গগনবিদারী চিৎকারে কেঁপে ওঠার কথা বার্নাব্যু, তখনই ফ্ল্যাগ তুলে দাঁড়ালেন লাইন্সম্যান। অফ সাইড। দানি কার্ভাহলের যখন ক্রসটি দিচ্ছিলেন, তখনই অফসাইডে ছিলেন রোনালদো। যে কারণে তার দুর্দান্ত হেডে করা গোলটি আর গোল হলো না। বাতিল হয়ে গেলো।

খেলার ৫ম মিনিটে দানি কার্ভাহলের একটি চেষ্টা পুরোপুরি বিফলে চলে গেলো। রোনালদোর কাছ থেকে বল পেয়েছিলেন তিনি। শুরুতে বল পেতেই যেন কষ্ট হচ্ছিল বার্সেলোনার। তবে খেলার ৮ম মিনিটে প্রথম বল পেয়ে দারুণ এক আক্রমণের সূচনা করেছিলেন মেসি এবং সুয়ারেজ। মেসি বল বাড়িয়ে দিলেও সুয়ারেজি ছিলেন অফসাইডে।

১২ মিনিটে দারুণ এক ধাক্কা খেয়ে বসেন রোনালদো। বাম উইং ধরে বল উঠে আসে রোনালদোর কাছে। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে বাম পায়ের দারুণ এক শট নেয়ার সুযোগ পান রোনালদো। কিন্তু তার পুরো শক্তি নিয়ে নেয়া শটটি বলেরই স্পর্শ পায়নি। বলের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে। পুরোপুরি বিভ্রান্ত রোনালদো।

খেলার ২৩১ মিনিটে রোনালদোর একটি শট ব্লক করে দেন বার্সা ডিফেন্ডাররা। লুকা মডরিচ দিয়েছিলেন বলটি। ৩০ মিনিটে দারুণ একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন বার্সেলোনার পওলিনহো। লিওনেল মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ শট নিয়েছিলেন পওলিনহো। ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই শট থেকে রিয়ালকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।

এক মিনিট পরই মার্সেলোর কাছ থেকে বল পেয়ে গোলের দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সার্জি রবার্তো কিংবা জেরার্ড পিকেদের ফাঁকি দিয়ে শন নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক টার স্টেগান। যদিও কর্ণার পায় রিয়াল এবং সেই কর্ণার কিক থেকে ভেসে আসা বলে দারুণ হেড নিয়েও গোল করতে পারেননি রোনালদো।

২ মিনিট পরই গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন করিম বেনজেমা। তার সেই শট ডিফেন্সেই বাধা পেয়ে থেমে গেলো। ৩৯ মিনিটে আবারও পওলিনহোর দুর্দান্ত এক চেষ্টা। লিওনেল মেসির নেয়া এক ক্রস থেকে দারুণ এক হেড নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেইলর নাভাস আবারও হতাশ করলেন পওলিনহোকে।

৪১ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর শট ব্লক করে দিলো বার্সার ডিফেন্স। খানিক পরই দানি কারভাহলের কাছ থেকে বল পেয়ে লুকা মডরিচের শট চলে যায় বক্সের বাইরে দিয়ে। ৪২ মিনিটে করিম বেনজেমার শট ডান পাশের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। বেঁচে যায় বার্সেলোনা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে এসে লিওনেল মেসির একটি শট ঠেকিয়ে দেয় রিয়ালের ডিফেন্স।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রিয়ালের আক্রমণ। দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে বাম পাশ ধরে এগিয়ে আসেন রোনালদো। তার দারুণ চেষ্টাটিও মিস হয়ে গেলো। এমনকি কর্ণারের আবেদন করেও সফল হলেন না তিনি। ৫৩ মিনিটে সত্যিকার গোলের চেষ্টা করে বার্সেলোনা। এবার জর্দি আলবার পাস থেকে বল পেয়ে লুইস সুয়ারেজের ডান পায়ের শট কেইলর নাভাস ঠেকিয়ে দিয়ে বাঁচিয়ে দেন রিয়ালকে।

পরের মিনিটেই গোল। কয়েকবারের চেষ্টায় প্রথমবার রিয়ালের জালে বল জড়াতে সক্ষম হন লুইস সুয়ারেজ। কাসেমিরোর কাছ থেকেই বলটি পেয়ে যায় বার্সা। ইভান র্যাকিটিক বল পেয়েই বক্সের মধ্যে ঠেলে দেন। সার্জি রবের্তো থেকে বল পেয়ে সুয়ারেজ প্রথমে শট নিলে ঠেকিয়ে দেন নাভাস। এরপর ফিরতি বলে রবের্তো শট নিলে সেটি পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এবার আর ভুল করলেন না সুয়ারেজ। এবার ফাঁকায় পেয়ে বলটি জড়িয়ে দিলেন রিয়ালের জালে। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।

খেলার ৬৩ মিনিটে এসে ১০ জনের দলে পরিণত হলো রিয়াল মাদ্রিদ। ডি বক্সের মধ্যে ইচ্ছে করে হাত দিয়ে বল ঠেকানোর কারণে দানি কারভাহলকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি। একই সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশিও বাজান তিনি। স্পট কিক থেকে রিয়ালে জালে বল জড়ান মেসি। ব্যবধান দাঁড়িয়ে গেলো ২-০। এ নিয়ে এল ক্ল্যাসিকোয় ২৫ গোল হয়ে গেলো মেসির।

৭০ মিনিটে ব্যবধান তিনগুণ হয়ে যেতে পারতো। লিওনেল মেসির বাম পায়ের শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক নাভাস। ৭৮ মিনিটে গ্যারেথ বেলের একটি চেষ্টা ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক টার স্টেগান। পরের মিনিটে আবারও বেল। এবার রাফায়েল ভারানের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান পায়ের শট নিয়েছিলেন বেল। কিন্তু সেটিও ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।

৮০ মিনিটে আরেকটি চেষ্টা ছিল বার্সেলোনার। লিওনেল মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে নেলসন সেমেদোর দারুণ একটি শট ঠেকিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক। ৮২ মিনিটে সার্জিও রামোসের একটি শট ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক। বাম পায়ের দারুণ এক শট নিয়েছিলেন রিয়াল অধিনায়ক। ৮৭ মিনিটে মেসির দারুণ একটি চেষ্টা ঠেকিয়ে দেন রিয়ালের গোলরক্ষক নাভাস।

খেলার নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ে এসে (৯০+৩ মিনিট) লিওনেল মেসির সহযোগিতায় দারুণ একটি গোল করে বসলেন আলেক্সি ভিদাল। ডান পাশ থেকে বল নিয়ে এসে পাস দেন মেসি। সেটি পেয়েই দারুণ এক শট নেন ভিদাল। সেটিই গিয়ে জড়িয়ে গেলো রিয়ালের জালে। এরপরই খেলা শেষের বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি।