আইএমএফের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। একইসঙ্গে রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি পরিবর্তনসহ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ও চলতি হিসাবে ভারসাম্য উন্নতি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফ’র মধ্যে শেষ বৈঠককালে এসব পরামর্শ দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থাটি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছের, মাসুদ বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকরা।
বৈঠক উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানান, গত বৃহস্পতিবার আইএমএফ স্টাফ ভিজিট মিশন ২০২২ নামে প্রতিনিধি দলটি ঢাকা সফরে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করার পর এসব পরামর্শ দেয়।
আইএমএফ’র বিস্তর আলোচনার মধ্যে ছিলো- করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ইত্যাদি।
আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের অর্থে গঠিত ইডিএফসহ বিভিন্ন ঋণ তহবিল গঠন করেছে। সেগুলো এখনও রিজার্ভে দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ এগুলো নন লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ। সংস্থাটির ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী এসব দায় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
আজকের আলোচনায় প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানতে চেয়েছে আইএমএফ। আলোচনায় উঠে আসে করোনাকালে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ও বাস্তবায়ন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুদ্রানীতি পদ্ধতির পরিবর্তন, বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবের ভারসাম্যের উন্নতি বিষয়। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবসায়িক নীতি পরিবর্তনের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠকে গুরুত্ব পায় ব্যাংকের রেপো রেট, কল মানি, ট্রেজারি বিল, বন্ড, আমানত ও ঋণের সুদের হার নিয়ে। এছাড়া করোনার মধ্যে ব্যাংকের গ্রাহক ও ঋণ খেলাপিদের দেওয়া বিশেষ সুবিধায় কতটুকু উপকৃত হয়েছে দেশের অর্থনীতি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কি পরিমাণ ঋণ পেয়েছেন, নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স সংক্রান্ত আলোচনা হয়। আইএমএফ জানতে চেয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স ও মূলধন সহায়তার পরিকল্পনা, খেলাপি ঋণ কমাতে স্বল্প মেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ নিয়ে।
আইএমএফ’র আলোচনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আইএমএফ’র পক্ষে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ এসেছে। সংস্থাটি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। এই নীতিমালা পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে তারা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি সংশোধনের যে প্রস্তাব আইএমএফ দিয়েছে তা মানতে রাজি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন