পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফার গল্প’ বাদ দিতে আইনি নোটিশ

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে শরীফা ও শরীফার গল্প বাদ দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

নোটিশে বলা হয়েছে, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে শরীফার গল্প রয়েছে। এখানে শরীফ আহমেদ একজন ছেলে এবং তার সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুযায়ী সে একজন ছেলে। কিন্তু সে মনে করে যে সে একজন মেয়ে। তাই তার নাম পরিবর্তন করে রেখেছে শরীফা। এখানে স্বীকার করা হয়েছে যে শরীফ আহমেদের শারীরিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু মানসিকভাবে মনে করে সে একজন মেয়ে।

ওই গল্পের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ট্রান্সজেন্ডারের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়েছে। সুকৌশলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি প্রেরণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া এক নয়, তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, হিজড়ারা জন্মগতভাবেই কিছুটা বিকৃত অঙ্গ নিয়ে জন্মায়। এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডারদের শারীরিক কোনো ত্রুটি থাকে না, তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুরুষ ট্রান্সজেন্ডার মনে করেন তিনি একজন নারী; একজন নারী ট্রান্সজেন্ডার মনে করেন তিনি একজন পুরুষ।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, এই ট্রান্সজেন্ডাররা বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হয়। তারা সমমৈথুনে লিপ্ত হয়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এই ট্রান্সজেন্ডারদের বিকৃত যৌনাচার সম্পূর্ণ অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দণ্ডবিধির ৩৭৭ অনুযায়ী পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী তথা প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাসের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতি থাকলেও এই ধারায় শাস্তিযোগ্য হবে। এ ক্ষেত্রে বিএলসি ১৯(এইচ ডি)১৭১ এর প্যারাগ্রাফ ৮ তে হাইকোর্ট বলেছেন দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় অপরাধের ক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতি থাকলেও ছাড় পাবে না।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে এই বিকৃত যৌন রুচির ও মানসিক বিকারগ্রস্ত ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই মানসিক বিকারগ্রস্ত ট্রান্সজেন্ডারদের কার্যকলাপ সুকৌশলে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে দেশে প্রচার করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে দেশের আপামর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: কী আছে আলোচিত শরীফার গল্পে?

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২-ক অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইসলাম। অপরদিকে সংবিধানের মৌলিক অধিকার অনুচ্ছেদ ৪১(১) অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের তার ধর্ম অবলম্বন ও পালন করার অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশের পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারদের কার্যকলাপ প্রচারের মাধ্যমে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করা হচ্ছে।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, বিকৃত যৌনাচার, সমমৈথুন (সেম সেক্স) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসে আঘাতের মাধ্যমে দণ্ডবিধির ২৯৫-এ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে, যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই আইনি নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে শরীফা ও শরীফার গল্প বাদ দেওয়াসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বইয়ের দোকান থেকে এই বই প্রত্যাহার করতে হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সংশোধিত বই সরবরাহ করতে হবে। অন্যথায় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট পিটিশন করা হবে।

উল্লেখ্য, রোববার প্রকাশ্যে ওই গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। এরপর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। যা নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলে। সর্বশেষ এই প্রতিবাদে যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিও। মঙ্গলবার রমনা পার্কে সপ্তম শ্রেণির ওই গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। ট্রেনের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অনশন করে আলোচনায় এসেছিলেন রনি।

নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্প পর্যালোচনায় পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আজ থেকে কাজ শুরু করবে।