ঢাকায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১৬ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে

১৬ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ২০ এ পৌছলেও প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ বলে ধারণা চিকিৎসকদের। দীর্ঘমেয়াদী বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির মাধ্যমে এডিস মশা ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও ঠেকেছে আড়াই-তিনগুণে। সিটি করপোরেশনের লোকবল সঙ্কট, মশক কর্মীদের সবখানে প্রবেশে বাধা এবং চরম অসচেতনতায় এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মত বিশেষজ্ঞদের। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় কমিটি গঠনের পরামর্শ তাদের।

১০ বছর বয়সী মনন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের হাই ডিপেডেন্সি ইউনিটে ভর্তি হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় মননের মতো হাজারো শিশু নাজুক অবস্থায় পড়ছে।

মননের চিকিৎসক বলেন, এখন তাকে অবজারভেশন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ৯ ও বেসরকারি হাসপাতালে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের অধিকাংশই শিশু যাদের বয়স ১২ বছরের নিচে। তাই তীব্র জ্বর, বমি বমি ভাব, চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হলে শিশুদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ চিকিৎসকদের।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, ডেঙ্গু হলে পেটে পানি আসবে, বুকে পানি জমবে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হলে গাম ব্লিডিং হতে পারে। এমন কিছু হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থবার ডেঙ্গু হলে সেটা বেশি সিরিয়াস হয়। চলতি বছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি, ধারণা করা হচ্ছে এরা আগেও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

মৌসুমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত জরিপে উচ্চমাত্রায় এডিস মশার উপস্থিতি সম্পন্ন ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড চিহ্নিত করা হয়েছে। আগাম বৃষ্টি হওয়ায় প্রাক মৌসুমেই এডিস মশার উৎপাত ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। মৌসুমেও অবস্থা একই রকম থাকায় সিটি করপোরেশনকে দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আকতারুজ্জামান বলেন, আমাদের সার্বিক ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ সমস্যা মোকাবেলায় সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আইডিসিআর’কে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার কথা মাথায় রেখে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছে দুটি সিটি করপোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল বলেন, সব জায়গাতে পৌঁছানে সম্ভব নয় তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রয়োগসহ প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফা বলেন, বিভিন্ন সোসাইটিকে নিয়ে বসে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, মেশিরানিজ কিংবা অন্যকোনো সহায়তা লাগলে সেটা আমরা করব।

১৬ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে পৌনে ৮ হাজারে। আক্রান্তদের সুচিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা সম্ভব হলেও স্ব উদ্যোগে ঘরে ঘরে সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নির্মূল সম্ভব নয় বলে মত বিশ্লেষকদের।