বার্সাকে কাঁদিয়ে রোমার ইতিহাস

সেমিফাইনালের টিকিট পেতে হলে কঠিন সমীকরণ মেলাতে হতো রোমাকে। সেই অসাধ্যই সাধন করল ক্লাবটি। আগুনে ফর্মে থাকা বার্সেলোনাকে বিদায় করে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে গেল ইতালিয়ান ক্লাবটি।

কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে বার্সার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেছে রোমা। প্রথম লেগে ন্যু ক্যাম্পে ৪-১ ব্যবধানে জিতেছিল আরনেস্টো ভালভার্দের দল। দুই পর্ব মিলিয়ে স্কোরলাইন ৪-৪ হলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে এগিয়ে সেমিতে উঠেছে ইউসেবিও দ্য ফ্রান্সেস্কোর দল।

এ জয়ে মধুর ইতিহাস গড়ল রোমা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টের শেষ চারে ওঠারকীর্তি গড়ল দলটি। এর আগে তাদের সেরা সাফল্য ছিল ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলা। তখন চ্যাম্পিয়নস লিগের নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ।

অন্যদিকে এ হারে টানা তিন মৌসুম কোয়ার্টারফাইনাল থেকে কান্না বিজড়িত বিদায় নিল বার্সা। সবশেষ ২০১৪-১৫ আসরে শিরোপা জিতেছিল দলটি। এখন পর্যন্ত পাঁচবার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুকুট পরেছে স্প্যানিশ দলটি। এবার সেই দৌড়ে সামনেই ছিল তারা।

প্রথম লেগে বিব্রতকর সব ভুলে বড় ব্যবধানে হারা রোমাকে সেমিতে উঠতে হলে অভাবনীয়, অবর্ণনীয় কিছু করতে হতো। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শুরুতেই সেই ইঙ্গিত দেয় তারা। ৬ মিনিটে ড্যানিয়েল ডি রসির বাড়ানো বল ধরে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন এডিন জেকো। এ নিয়ে বার্সার বিপক্ষে শেষ তিন ম্যাচে তিন গোল করলেন তিনি।

এগিয়ে গিয়ে আত্মবিশ্বাসে আরও জ্বালানি পায় রোমা। পরে মুহুর্মুহু আক্রমণে অতিথিদের কোণঠাসা করে ফেলেন তারা। তবে গোলমুখ খোলেনি। ফলে ১-০ ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যেতে হয় লা লুপাপাদের।

দ্বিতীয়ার্ধেও সেই ক্ষুরধার রোমা। এবার এগিয়েও যায় তারা। ৫৮ মিনিটে সফল স্পট কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডি রসি। ৮২ মিনিটে শেষ পেরেক ঠুকেন কোস্তাস মনোলাস। এতে জয়ও একরকম নিশ্চিত হয়।

ফর্মের মগডালে আছেন লিওনেল মেসি। অথচ গুরুত্বপূর্ণ দিনেই কিনা তিনি ফ্লপ! আসলে এ কৃতিত্ব দিতে হবে রোমার ডিফেন্ডারদের। ছোট ম্যাজিসিয়ান বল পেলেও দুর্দান্ত ট্যাকলে কেড়ে নিয়েছেন তারা। ফলে গোটা ম্যাচেই বোতলবন্দি থেকেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।

তবে এদিন দুর্দান্ত ছিলেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেন। একাধিক সেভ করেছেন তিনি। না হলে আরও গোল হজম করতে হতো সফরকারীদের। শেষ পর্যন্ত ৩-০ হারে বড় লজ্জা থেকে বেঁচেছে তারা।

মজার বিষয়, প্রথম লেগে আত্মঘাতী গোল করে খলনায়ক বনে গিয়েছিলেন ডি রসি ও মনোলাস। দ্বিতীয় লেগে যেন সেই ভুলের প্রায়শ্চিত করলেন তারা। একটি করে গোল করে দলের জয়ে রেখেছেন অনন্য অবদান। এখন দুজনই রোমার নায়ক।

ম্যাচ শেষে তাদের মধ্যমণি করে জয়োল্লাসে মাতে রোমার কোচ-খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা। সমর্থকদের কাছে তা অবিশ্বাস্য ঠেকে। অনেকের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। অন্যদিকে হতাশায় নুয়ে পড়ে বার্সা খেলোয়াড়, কোচ-কর্তা, অগনিত ভক্তরা। চোখের জলে মাঠ ছাড়ে তারা।