বিএনপি প্রার্থীদের কথা বলতে দেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি সংসদীয় আসনে নানা কারণে ৪০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম চলে।মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া কোনো প্রার্থীকে কথা বলার সুযোগ দেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল হোসেন তাপসের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সামনে থাকা মাইকক্রোফোন চালু করে কাজল কয়েক দফা কথা বলার চেষ্টা করলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা হায়াত-উদ-দৌলা খান তাকে থামিয়ে দিয়ে মাইক্রোফোন অফ করতে বলেন। এ সময় তারা দুইজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

নাজমুল হোসেন তাপস জানান, ইলেকশনের ‘কোড অব কনডাক্ট’ এবং নিয়ম হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমাকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোনো ডকুমেন্ট পেশ করার থাকলে তা করতে দিতে হবে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি শুরুতেই থামিয়ে দেন সেটি দুর্ভাগ্যজনক।

তিনি আরও বলেন, আমার সোনালী ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ ক্লিয়ার। ব্যাংকের সেই চিঠি ছিল, স্ট্যাটমেন্ট ছিল। আমার আইনজীবী সে ব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা হায়াত-উদ-দৌলা খানের বিরুদ্ধে তাপসের মতো আরও কয়েকজন প্রার্থী একই অভিযোগ করেছেন। তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়ার কারণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম শুরুর পর বাতিল হওয়া প্রার্থীরা নিজেদের সমর্থনে কথা বলতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখানে হেয়ারিংয়ের জন্য বসিনি। আপনারা নির্বাচন কমিশনে তিনদিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবাদুল করিম বুলবুলের বিরুদ্ধে হলফনামায় অসত্য তথ্য দেয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন একই আসনের সাবেক এমপি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মনোনীত প্রার্থী শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন।

বুলবুলের মনোনয়নপত্রের বাছাই শুরু হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা কারও অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে জিকরুল দাঁড়িয়ে তার আপত্তি আছে বলে জানান। কিন্তু কথা বলতে চাইলে জিকরুলকে থামিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

একই আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী কাজী মো. মামুনুর রশিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় তার দেয়া হলফনামায় মামলার তথ্য উল্লেখ না করায়। এ নিয়ে মামুনুর রশিদের প্রতিনিধি ও নবীনগর উপজেলা জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক রজব আলী মোল্লাহ কথা বলতে চাইলে তাকেও কোনো কথা বলার সুযোগ দেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের দাখিল করা এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকায় দুইজন ভোটারের বিষয়ে ত্রুটি থাকায় দুই ভোটারকে হাজির রাখা হয়।

পরে এ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তানভীর হোসেন কাউছার ও আশরাফ উদ্দিন দাঁড়িয়ে বলেন, তারা এক শতাংশের বেশি ভোটারের তালিকা দিয়েছেন। এতে ২-৩টি ভোট এদিক-সেদিক হতে পারে। ওই প্রার্থীর মতো তাদেরকে আগে জানিয়ে দিলে তারাও সেটি নিরসন করতে পারতেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মুশফিকুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল হওয়া নিয়ে জেলাজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। মনোনয়নপত্রের ফরম নম্বর ২১ পূরণ না করায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র-৪-এর ৬ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে- প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে তার সম্পদ ও দায়ের বিবরণী এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের রিটার্ন নির্ধারিত ফরম ২১-এ মনোনয়ন সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে। তিনি আয়করদাতা হলে সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের অনুলিপিও বিবরণীর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এটি সংযুক্ত না করলে মনোনয়ন বাতিল হবে সেকথা বলা হয়নি পরিপত্রে।

মুশফিকুর রহমানের রাজনৈতিক সহকর্মী আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর মিশন বলেন, মুশফিকুর রহমানের সম্পদের বিবরণী হলফনামায় দেয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্রে নির্ধারিত ফরমে জায়গা না হওয়ায় সেটি তারা হলফনামায় দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে সংযুক্ত কথাটি উল্লেখ না করায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ওই ফরমে মুশফিকুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আবদুল খালেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার বিবরণী হলফনামায় সঠিক না দেয়ার কারণে।

তবে আবদুল খালেক বলেন, ঢাকার তুরাগ থানায় আমার বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে এখানে শো করা হয়েছে। কিন্তু এ মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উদ্দেশ্যেমূলকভাবে কে কখন এ মামলা করে রেখেছে জানি না। আমিও আপিল করব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, আমি কারো কথা শুনিনি এ অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা শুধু মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাছটি করেছি। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ আছে।