৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যকর

অক্সফোর্ডের টিকায় ৯৩ শতাংশের অ্যান্টিবডি: ঢাকা মেডিকেলে গবেষণা

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক এবং কর্মচারীদের মধ্যে যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন, তাদের ৯৩ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

টিকা নেওয়া ৩০৮ জনের ওপর গবেষণা চালিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ রোববার তাদের এই ফলাফল প্রকাশ করে।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এসএম সামসুজ্জামানের নেতৃত্বে পাঁচ মাস ধরে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল তুলে ধরে অধ্যাপক সামসুজ্জামান বলেন, ‘টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ৪ সপ্তাহ পর তারা এক দফা নমুনা সংগ্রহ করেন। তখন ৪১ শতাংশের শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়।’
‘দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ২ সপ্তাহ পর, কিন্তু ৪ সপ্তাহের মধ্যে আবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। তাতে ৯৩ শতাংশ টিকাগ্রহীতার শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে’ বলে জানান সামসুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘এ গবেষণায় যারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবার বয়স ৩০ বছরের বেশি। তাদের ৮০ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হল কি না, তা দেখা।’

‘যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা কতদিন কার্যকর থাকবে’- এমন বিষয়ে অধ্যাপক সামসুজ্জামান বলেন, ‘অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পর তা ছয় মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে কতদিন, তা নিয়ে এখনও বিজ্ঞানিদের হাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নাই। এটা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।’

ঢাকা মেডিকেলের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. টিটু মিয়া, উপাধ্যক্ষ ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী এবং হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকও উপস্থিত ছিলেন।

এ গবেষণার ফলাফলকে পুরো সমাজের চিত্র বলে ধরা যায় কি না- এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ ডা. মো. টিটু মিয়া বলেন, ‘এটা পুরো দেশের চিত্র বহন করে না। কারণ এই গবেষণা করা হয়েছে একটি বিশেষ শ্রেণির ওপর। তবে ৩০৮ জনের এই স্যাম্পল সাইজ কিন্তু একেবারে কম না। এটা থেকে আমরা মোটামুটি একটা ধারণা পেতে পারি। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হলে আরও বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন আছে।’

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণটিকাদান শুরু হয়।

টিকার সঙ্কটে এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া দেওয়া বন্ধ রয়েছে। তবে চীন থেকে উপহার পাওয়া সিনোফার্মের এবং কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের টিকা এখন দেশে দেওয়া হচ্ছে স্বল্প পরিসরে।

গত মাসে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের (পিএইচই) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দুই ডোজের পূর্ণাঙ্গ কোর্স করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে সেখানে দেখা গেছে।

গবেষকরা বলে আসছেন, টিকা নেওয়ার পরও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে তাদের ক্ষেত্রেও লক্ষণ এবং অসুস্থতার মাত্রা কম থাকবে।

দেশে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪২ জন দুই ডোজ নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন।