আশুলিয়ায় নিখোঁজের ১০ দিন পর কলেজ ছাত্রের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার, আটক-৩

নিখোঁজের ১০ দিন পর আশুলিয়ার শ্রীপুর থেকে কলেজছাত্র হৃদয়ের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় বন্ধুদের হাতে খুন হন হৃদয়। এঘটনায় অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে ৩ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব ও নিহতের পরিবার জানায়, গত ৮ মে বিকেলে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কলেজছাত্র ফারাবি আহমেদ হৃদয়। এর একদিন পর কে বা কারা মুঠোফোনে হৃদয়ের মায়ের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ১০ মে আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করে হৃদয়ের পরিবার। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও হৃদয়ের খোঁজ না পাওয়ায় র‌্যাবের সহযোগিতা চায় পরিবারের সদস্যরা।

র‌্যাব জানায়, হত্যাকারী পরান, বাপ্পী, আকাশ ও শাহিন চারজনেই জামগড়া এলাকায় হৃদয়ের প্রতিবেশী বন্ধু। আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হতে দীর্ঘদিন ধরে হৃদয়কে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পণা করে আসছিলো তারা। গত ৮ মে রাতে জামগড়া এলাকায় বন্ধু আকাশের বাসার একটি কক্ষে হৃদয়কে আটকে রেখে তার পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে বন্ধু পরান। টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পরান, বাপ্পী, আকাশ ও শাহিন গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হৃদয়কে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত করার জন্য তাকে বালিশচাপাও দেয়া হয়। সেই রাতেই একটি ভ্যান চুরি করে হৃদয়ের মরদেহ বস্তায় ভরে শ্রীপুর এলাকায় নিয়ে যায় চার বন্ধু। এরপর মৃতদেহটি নির্জন স্থানে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পর মরদেহ ভেসে উঠতে পারে এমন সন্দেহে হত্যাকারীরা বস্তার ভিতরে ইট ভরে দেয়।

এঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার পর র‌্যাব স্বজনদের দেওয়া তথ্যমতে গতকাল বুধবার রাতে সন্দেহভাজন পরানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে আশুলিয়ার শ্রীপুরের একটি পুকুর থেকে হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত বাপ্পীকে টাঙ্গাইল থেকে ও মিরপুর থেকে শাহিনকে আটক করা হয়। এঘটনায় আকাশ এখনও পলাতক রয়েছে।

নিহত হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে আশুলিয়ার শ্রীপুরে ছুটে যায় তার পরিবার। এসময় নিহতের পরিবারের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নৃশংস এ্ই হত্যাকান্ডে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। এসময় পুলিশের দায়িত্ব অবহেলাকেও দায়ী করেন তারা।

এঘটনায় আশুলিয়া থানায় নিহতের বাবা ফজলুল হক বাদী হয়ে চারজনের নামে ও অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রহমান জানান, একটি অভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে আশুলিয়া থানাধীন এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে অপহৃত ভুক্তভোগীর মরদেহ উদ্ধারপূর্বক উক্ত অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত পরান ও বাপ্পিকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।