ঈদে ২০০ গার্মেন্ট ঘিরে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা

নির্বাচন সামনে রেখে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের ২০০ পোশাক কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে গার্মেন্টের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ তথ্য জানান। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান সভায় বলেন, ‘ক্রাইসিস হয়ে গেলে সামর্থ না থাকলেও পেমেন্টে করতেই হয়, সেজন্য আগে থেকে করাটাই ভালো।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের ১২২টি, ঢাকার বাইরের আরও ৪৮টিসহ মোট ২০০ গার্মেন্টে ঈদের আগে বেতন-ভাতা দিতে পারবে না বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। যদি ২০টি গার্মেন্টে সমস্যা হয় তাহলে মানুষের ঈদ মাটি। রোড বন্ধ হয়ে গেলে উত্তরবঙ্গ রুট, চট্টগ্রামের রুট এবং সিলেটের রুটে বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই অনুরোধ করবো ওয়ান টু ওয়ান বসে সমস্যা সমাধান করতে।’

মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘এনজিও আছে, এখানে অনেক পক্ষ আছে, তারা যতটা না শ্রমিক সংগঠন তার চেয়ে বেশি পলিটিক্যাল সংগঠন। বিষয়গুলো বিবেচনার অনুরোধ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা নির্বাচনী বছর, ঈদের আগে শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে কেউ ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।’

গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি লিমা ফেরদৌস বলেন, ‘আইনে আছে আনরেজিস্টার্ড শ্রমিক সংগঠন মিছিল-মিটিং করতে পারবে না, করলে ৬ মাসের জেল হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কারো কিছুই হশিল্পঘন এলালো না। কায় একটি এনজিও বড় বড় অফিস ভাড়া নিয়ে শ্রমিকদের ব্রেইনওয়াশ করছে।’

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘২০১৮ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় নির্বাচনের জন্য। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্য দিয়ে কার্যপত্রে বলা হয়, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং খুলনা এলাকার মার্চে শ্রমিক অসন্তোষ ঘটা কারখানার সংখ্যা ১৬৮টি এবং এপ্রিলে ১৫৮টি।

৭/৮ দিন পূর্বে বেতন-ভাতা ও বোনাস প্রদান না করা, বোনাসের পরিমাণ কম, সময় চাহিদা মোতাবেক ছুটি না পাওয়া, বেতন-ভাতা প্রদান না করেই ঈদের সময়ে লে-অব ঘোষণা করা, শ্রমিক ছাঁটাই বা নির্যাতন বা হয়রানির কারণে অসন্তোষ হতে পারে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা সভায় বলেন, ‘সরকারি পাটকলে সমস্যা হতে পারে। তারা খুলনা সড়ক অবরোধ করবে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ জানাতে হবে।’

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যেসব পোশাক কারখানা আমাদের মেম্বার না, আমরা তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারি না। কমপ্লায়েন্স না হলে আমরা এখন কোন কারখানাকে মেম্বার করছি না। আমরা এখন ডাটাবেজ করছি। এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত আমাদের মেম্বার কারখানাগুলোর শ্রমিক সংখ্যা ৩০ লাখ। এছাড়া আমরা কারখানার ম্যাপিংও করছি।’

পোশাক শ্রমিকদের নতুন ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর থেকে নতুন ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হবে। ন্যূনতম মজুরি কত হবে, কী করা যায় আমরা সেই হিসাব করছি। মিটিং হচ্ছে না, আমরা কাজ কিন্তু করছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আমরা মজুরি ঘোষণা করব।’

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক এনজিও আছে যারা ইনটেনশনালি আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমাদের সবাইকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’