উপরওয়ালাই এক মাত্র ভরসা ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা শেফালীর

এক সময়ে ছোট্ট সুখের নীড়ে বসবাস ছিল তার। স্বামীর রোজগারে একমাত্র ছেলে সন্তানকে নিয়ে বেশ আনন্দেই কাটছিল জীবন সংসার। কিন্তু নিয়তীর নিঠুর বাস্ততার ঝড়ে সেই সুখে থিতু হতে পারেননি অভাগী এই গৃহবধূ।

স্বল্প সময়ে প্রাণের প্রিয় স্বামী সন্তানকে হারানোর ফলে জগদ্দল পাথরের মত দুঃখের খড়গ চেপে বসেছে তার জীবনে। এখন শেষ বয়সে পাশে কেউ না থাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবীকা নির্বাহ হয় তার। আর উপর্জান না হলে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়েন পেটে ক্ষুধার জ্বালা নিয়েই। তাই উপরওয়ালাতেই এখন শেষ ভরসা রাখছেন দেশের প্রবীন এই নাগরিক। তার নিদারুন কষ্টের করুণ বাস্তবতায় যেন অবাক তাকিয়ে রয়।

৮৩ বছর বয়সী মোসা. শেফালী বেগম কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউপির চর চান্দুপাড়া গ্রামের মৃত আজিয শরীফের স্ত্রী তিনি। দীর্ঘ ৫০ বছর আগে সমুদ্রে গিয়ে নিখোঁজ হন তাকে পরম যতনে আগলে রাখা ভালবাসার প্রিয় মানুষটি। এর পরে তিনি আর ফিরে আসেননি। তবে স্বামীর খোঁজ না পেয়ে একমাত্র ছেলে সন্তানকে আকড়ে ধরে শুরু হয় তার নতুন করে পথচলা। আর ছেলে বড় হয়ে উপার্জন করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পারি জমান রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায়।

কিন্তু নিয়তীর কাছে হার মেনে সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২০ বছর বয়সী ছেলে শহীদুলের। আর এখানেই থমকে দাঁড়ায় শেফালীর সুখের গল্প। ভিটে মাটি না থাকায় পরে ভবঘুরে হয়ে যান তিনি। দেহের নিঃস্বাসটুকু সচল রাখতে বেছে নেন ভিক্ষা বৃত্তির পেশা। তবে বয়সের ভাড়ে প্রায় শতবর্ষী এই বৃদ্ধার রোগাক্রান্ত দুর্বল শরীর নিয়ে এখন বেশিক্ষণ হাটতেও পারেন না তিনি। তবুও বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশাটুকু নিয়ে ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে ঘুরে বেড়ান মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।

যেদিন ভিক্ষাবৃত্তিতে উপার্জন হয় সেদিন উনুনে হাঁড়ি ওঠে তার। আর না হয় পেটে ক্ষুধা নিয়েই ঘুমিয়ে পরেন তিনি। কথা হলে শেফালী বেগম জানান, কোন যায়গা জমি না থাকায় কলাপাড়া পৌর শহরের বাদুরতরী ¯øুইজঘাট এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী আনসার মিয়ার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন তিনি। সেখানে একটি কক্ষের জন্য মাস প্রতি ১ হাজার টাকা দিতে হয় তার। আর সরকারী ভাবে একটি ভাতা তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হলেও কোন অর্থ আজও পাননি তিনি।

তাই উপরওয়ালাই এখন শেষ ভরসা তার। এবিষয়ে লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিশ্বাস বলেন, ওই বৃদ্ধা মা আসলেও অত্যন্ত অসহায় একজন মানুষ। তার নাম ভাতার তালিকায় দেয়া হয়েছিল। কিন্ত কি একটা সমস্যার কারণে টাকা পাচ্ছেন না তিনি। আর সরকারী ঘরের বিষয়ে বলেন, যখন তালিকা নেয়া হচ্ছিল তখন তাকে পাওয়া যায়নি। পরে শুনেছি তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে আমি এখন তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। আগে তার ভাতার বিষয়টি সমাধান করতে হবে। এদিকে সচেতন মহলের দাবী কলাপাড়া উপজেলায় শতভাগ অসহায় মানুষদের প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তাদের উদাসীনতার ফলে এই অসহায় মা মাথা গোজার ঠাই থেকে বি ত হয়েছেন।