কলারোয়ার ফোর মার্ডার: নিহতের ভাই গ্রেপ্তার

চার খুনের ঘটনার পর থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়ার নিহত শাহিনুরের বাড়িতে এখনও কৌতুহলী মানুষের ভিড় কমেনি। সাতক্ষীরা যশোর সড়কধারের পুরো বাড়ি ও পাড়াজুড়ে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। নিহতের ভাই গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবদের জন্য আটককৃত আব্দুর রাজ্জাক ও আসাদুলকে শুক্রবার বিকেলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতের স্বজনদের চোখে মুখে আতঙ্ক।

তবে ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ৪ মাসের শিশু মারিয়া সুলতানা বর্তমানে কলারোয়ার হেলাতলা ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে রয়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শাহিনুর, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহি ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মেয়ে তাসনিম সুলতানার লাশ শুক্রবার ভোরে নিকটস্থ ব্রজবাকসা গ্রামে শাহিনুরের মামা আবদুল কাদেরের পারিবারিক গোরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।

জানা গেছে, সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে বৃহষ্পতিবার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারকৃত নিহত শাহিনুরের ভাই রায়হানুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতে জিজ্ঞাসাবদের জন্য আটককৃত খলিসা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ও নিহত শাহীনুর রহমানের মাছের হ্যাচারির কর্মচারি উপজেলার ধানঘরা গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে আসাদুলকে শুক্রবার বিকেলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে একই পরিবারের রোমহর্ষক এই হত্যার ঘটনায় বৃহষ্পতিবার রাতে কারো নাম উলে­খ না করে কলারোয়া থানায় মামলা (নং-১৪) করেছেন শাহিনুরের শাশুড়ি কলারোয়ার ওফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজির স্ত্রী ময়না বেগম।

অপরদিকে নিহতের মা আয়েশা খাতুন, বোন আছিয়া, ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফাহিমা বলেন, প্রতিবেশি আকবর আলীর সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। তারা বিভিন্ন সময়ে শাহীনুর ও রায়হানুলকে হুমকি দিয়েছে। আকবরকে না ধরে পুলিশ রায়হানুলকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে বা তার পরিবারের কাউকে বাদি না করে পুলিশ শাহীনুরের শ্বাশুড়িকে থানায় ডেকে এনে মামলা করিয়েছে।

রায়হানুলের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফাহিমা বলেন, বৃহষ্পতিবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ তাকে বাপের বাড়ি থেকে ডেকে কলারোয়া থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ১২টার পর বাসায় রেখে যায়। এ সময় রায়হানুলের হাতে একটি কাটা দাগ নিয়ে প্রশ্ন করে।

কলারোয়া থানার ওসি (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল বলেন, চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার মামলাটির তদন্তভার সিআইডি’র হাতে গেলেও তাদেরকে তদন্তে সহযোগিতা করতে পুলিশ কাজ করছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলা সিইআডি’তে। আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।’

সাতক্ষীরার সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান বলেন, শুক্রবার সিআইডি কলারোয়ার ফোর মার্ডার মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করা যাবে না।

এর আগে বৃহস্পতিবার রায়হানুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছিল।

উলে­খ্য, যে বৃহস্পতিবার ভোরে কলারোয়ার হেলাতলা ইউপির খলিসা গ্রামে সন্ত্রাসীরা মাছের ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর ও তার স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তানকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তবে, ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের ৬ মাস বয়সী শিশু কন্যা মারিয়া।