কুড়িগ্রামে লকডাউনে কর্মহীন শ্রমজীবী ও নিন্ম আয়ের মানুষ

কুড়িগ্রামে করোনা প্রতিরোধের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সরকারের ঘোষিত লকডাউনে বিপাকে পরেছে শ্রমজীবী ও নিন্ম আয়ের মানুষজন।
কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে জেলার শ্রমজীবী মানুষজন।
আন্তঃজেলা ও দুরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় রিক্সা আর অটো চালকের আয় কমে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে রয়েছেন বিপাকে।

কুড়িগ্রাম শহরের কালিবাড়ী পাটগোডাউন, পশু হাসপাতাল মোড় এর ঠেলাগাড়ী আর ভ্যানচালক জমশেদ, রফিক, হাসেম, কপিল জানান, গত কয়েকদিন ধরে তারা ভাড়া পাচ্ছেন না। আগে বিভিন্ন মাল পরিবহন করে ৪ থেকে ৫শত টাকা রোজগার হলেও এখন ১ থেকে ১শত ৫০ টাকা আয়। এ দিয়ে সংসার চলছেনা। তারা সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা সহ স্বল্পমুল্যে পণ্য সহযোগিতা চান।

লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িতদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। দোকানপাট খুলতে না পারার কারণে জীবন ও জীবিকায় খড়গ নেমে আসায় বিভিন্নভাবে ঋণ করে সংসার নির্বাহ করা এসব পরিবারের কাছে লকডাউন যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। ঝুঁকি নিয়ে অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও একদিকে ক্রেতার অভাবে বিক্রিবাটা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে মোবাইল কোর্টের জরিমানার ভয়তো রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জিয়া বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মজিদলু, রমজান, সফিকুল ও আবুল জানান, লোন করে আমরা কোনরকমে ব্যবসা করি। প্রতিদিন কিস্তি দিতে হয়। এখন ব্যবসা প্রায় বন্ধ। ঘর থেকে টাকা এনে কিস্তি শোধ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ সুদের উপর টাকা নিয়ে কিস্তি দিচ্ছে।

কাচামাল ব্যবসায়ী মজনু জানান, সকাল থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ব্যবসা করি, মাল বেশিরভাগ পড়ি থাকে। পরেরদিন আসি দেখি মাল পঁচি যায়।

খলিলগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ছামসুল জানান, ক্ষুদ্র গালামালের ব্যবসা করে আমার অসুস্থ্য স্ত্রী ও পূত্রের চিকিৎসা করছি। লকডাউনের ফলে ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। এখন চিকিৎসা ব্যয় মেটাবো কিভাবে!

বিশেষ করে শহরে যারা নির্মাণাধীন বাড়িতে কাজকর্ম করছেন তারা বিকেলে বাড়ীতে ফেরার সময় হাটবাজার করতে না পেরে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছেন।

খলিলগঞ্জ বাজারের পাশে একটি ফ্লাটে কর্মরত ছকিনা ও জসমত জানান, গতকালে টেকা নিয়া বাজারোত ঢুকি দেহি সউগ দোকান বন্ধ। চাউলও কিনবের পারি নাই। তরকারিও কেনা হয় নাই।

এরকম অবস্থা হয়েছে শ্রমজীবীদের।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন হোটেল শ্রমিকরা।
তারা জানান, হোটেল বন্ধ থাকায় তারা অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে রয়েছেন। তারা জানান আমরা নিরুপায় হয়ে এই করোনার মধ্যে ঠেলা আর ভ্যান নিয়া বের হই।

নিন্ম আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষজনকে লকডাউনের সময় স্বল্পমুল্যে চাল ডাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য বিতরণ করা গেলে করোনাকালীন সময়ে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা একদিকে যেমনগড়ে তোলা সম্ভব হতো অন্যদিকে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকতো।