কোনো তালিকায় নাম নেই! বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নানান অপকর্ম!

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সন্তানের চাকুরী থেকে শুরু করে জমি দখল মিথ্যা মামলাসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে চলেছেন সাতক্ষীরা সদরের আব্দুল খালেক মজলিশ নামের এক ব্যক্তি। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনতো করেননি বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের কোনো তালিকায়ও তার নাম নেই, গেজেট নেই। অথচ তিনি সবখানেই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছেন। আব্দুল খালেক মজলিশ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দামারপোতা গ্রামের মৃত. পরশউল্লাহ মজলিশ এর ছেলে।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল করে প্রতারণা ও মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদে পুত্রের চাকুরী গ্রহণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদর উপজেলা কমান্ড ডেপুটি কমান্ডার মো. সফিক আহম্দ লিখিতভাবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এর চেয়ারম্যান এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

তিনি লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, আব্দুল খালেক মজলিশ কোনো তাালকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। সর্বশেষ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে সমন্বিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানেও তার নাম নেই। অথচ বীর মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার দ্বিতীয় পুত্র মো. তৌহিদুজ্জামান মজলিশ বিআরডিবি’ ইউনিয়ন ডেভলপমেন্ট অফিসার পদে চাকুরী নিয়েছেন। তার অপর ৪ চারপুত্র পিতার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে জমি দখল থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম করে চলেছে। শুধু তাই নয় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মিথ্যা মামলা করেও হয়রানী করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। বিভিন্ন অফিস আদালতে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করছেন। এমনকি ২০১৩-১৪ সালে সাতক্ষীরায় সংগঠিত সহিংসতায় তাদের পরিবারের যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

লিখিত আবেদনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিক আহম্দ মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া সনদে সরকারি চাকুরী গ্রহণসহ সমগ্র বিষয়গুলি তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ১৩ জুন তারিখে লিখিতভাবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এর চেয়ারম্যান এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মুত্তিযুদ্ধের কোনো তালিকায় নাম না থাকা, ভারতীয় তালিকা, মুক্তিবার্তা বা সরকারী গেজেট বা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকায় নাম না থাকা প্রসঙ্গে আব্দুল খালেক মজলিশ বলেন, তার ঢাকায় কথা হয়েছে সব কাগজপত্র ঠিক করে পাঠিয়ে দেবে। যাচাই-বাছাইতে এবার তার নাম আছে বলে তিনি দাবী করেন। তিনি কোথায় মুত্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণে’। কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সে প্রশ্নের জবাবেও বলেন, ‘দক্ষিণে’। মুক্তিযোদ্ধা হলে ভাতা পান কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার অনেক জায়গা-জমি আছে তাই তিনি ভাতা নেন না। তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরী কী না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে পরীক্ষা দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা কী না তা তিনি বলতে পারবেন না।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান (মশু) বলেন, এধরনের ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যে কাজগুলি করছেন তা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক। তিনি কখনও কোথাও তালিকাভুক্তও হতে পারবেন না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, এ এবিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদর উপজেলা কমান্ড ডেপুটি কমান্ডার মো. সফিক আহম্দ তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।