খাগড়াছড়িতে ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ, প্রশাসন নিরব

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন নিরবতা পালন করে চলছে। জেলাতে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পরিবেশ আইন না মেনে দেদারছে চলছে পাহাড় কাটা। বাড়ি নির্মাণ, পুকুর ভরাট, রাস্তা সংস্কার ও ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজের অজুহাতে পাহাড় কাটছে একটি চক্র। পাহাড়ের মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। দিনে-রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার বিশাল কর্মযজ্ঞ চললেও প্রশাসন যেন ঘুমিয়ে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে খাগড়াছড়ি অপরুপ প্রাকৃতিক পরিবেশ। শঙ্কা দেখা দিয়েছে আবারও পাহাড় ধসে প্রাণহানির।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় রাকিব হোসেন নামে এক ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন শ্রী মতি রঞ্জন ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু পত্র গ্রহণের প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স সেলিম এন্ড ব্রাদার্স রাবার প্লান্ট’র ব্যবস্থাপক মতি রঞ্জন ত্রিপুরা দীঘিনালায় রাকিব হোসেন নামে এক ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্র আবেদনটি চলতি মাসের ৩রা মে গৃহীত হয়। চিঠি গ্রহণের দীর্ঘ দিন পার হলেও কোন ধরনের তদন্ত বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি রাকিব হোসেনের বিরুদ্ধে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত রাকিব হোসেন দীঘিনালার গুলছড়ি ও জামতলি এলাকায় নিজস্ব মালিকানা হিসেবে দুইটি ইট ভাটা পরিচালনা করেন। ভাটা ২টিতে মাটির যোগান দিতে সেলিম এন্ড ব্রাদার্স’র নিজস্ব মালিকানাধীন পাহাড় এবং আশপাশের সরকারি পাহাড় কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই কেটে ফেলেছে এবং পরিবেশের ক্ষতি করছে। অভিযোগকারী ও স্থানীয় জনগণ একাধিকবার বাঁধা দিলেও জোরপূর্বক পাহাড় কাটা চালিয়ে যায় রাবিক হোসেন। তাকে কোন অবস্থাতেই পাহাড় কাটা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছেনা।

সবশেষ গেলো ঈদুর ফিতরের বন্ধের সময় দিনে-রাতে পাহাড় কাটার সময় অভিযোগকারী মতি রঞ্জন ত্রিপুরা ও স্থানীয় লোকজনসহ বাঁধা দিতে গেলে রাকিব হোসেনের পালিত সন্ত্রাসীরা তাদের ধাওয়া করে।

অভিযোগপত্রে আরোও বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে পাহাড় কাটা চালিয়ে যাচ্ছে রাকিব। এইভাবে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে চলমান বর্ষায় বড় ধরনের পাহাড় ধসে জনজীবন বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশাল আকারে ক্ষতি হয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাকিব হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন ধরনের সাড়া দেননি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার সংযোগের চেষ্টা করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সেলিম এন্ড ব্রাদাসের মালিক মো: সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইট ভাটা মালিক রাকিব সাহেবকে বিভিন্নভাবে নিজস্ব মালিকানাধীন পাহাড়টি না কাটতে অনুরোধ করা হলেও তিনি তা শুনেননি। পাহাড়টির দু’পাশের মাটি এমনভাবে কাটা হয়েছে এতে পাহাড়টি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণও দাবি করেন মো: সেলিম। যদিও মো: সেলিম নিজেও ইটভাটার মালিক।

দীর্ঘ দিন ধরে রাকিব হোসেনের বিরুদ্ধে ইট ভাটা পরিচালনায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় কেটে মাটি ছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে তার ইট ভাটায় ব্যবহারে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়ভাবে। দীঘিনালা ইট ভাটা ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণসহ অপর ভাটা মালিকদের জিম্মি করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ দূষণ ও আইন অমান্যের দায়ে বিভিন্ন সময় লাখ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে রাকিব হোসেনকে।

ইটভাটা মালিক রাকিব হোসেনের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলে অভিযোগ করতে চাননা। বিশেষ করে ভাটা মালিকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শঙ্কাবোধ করেন।

পাহাড় কাটা অভিযোগ নিয়ে দীঘিনালা উপজেলার নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) আরাফাতুল আলম বলেন, যোগদানের পর থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পাহাড় কাটার কোন অভিযোগ তিনি পাননি। কোন ধরনের অভিযোগ পেলে তা নোট নিয়ে রাখবেন। অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যান ইউএনও। তবে পাহাড় কাটা দন্ডনীয় অপরাধ বলছেন তিনি।

খাগড়াছড়ি পরিবেশবাদী সংগঠক ও গণমাধ্যমকর্মী অপু দত্ত বলেন, অভিযোগ-আন্দোলনতো করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। সবুজ পাহাড় এখন আর নেই। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি পরিবেশগত প্রভাবও পড়ছে। পাহাড়া কাটার বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার ফলে রাঘব-বোয়ালদের থামানো যাচ্ছেনা। বরং সিন্ডিকেটগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠছে। জেল জরিমানার পাশাপাশি সঠিক আইনের প্রয়োগে এখন পাহাড় রক্ষার বড় হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন তিনি।

খাগড়াছড়ি বন বিভাগের উপ-বন সংরক্ষক হুমায়ুন কবীর জানান, যত্রতত্র পাহাড় কাটা ও বন উজাড়ের ফলে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের জীব বৈচিত্যতা। নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এছাড়াও ঝুঁকিও বাড়ছে পাহাড়। পাহাড় ও পাহাড়ের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্মলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলছেন তিনি। একইসাথে সামাজিক বনায়ন সৃষ্টির প্রতি নজর দেয়ার জন্য আহবান জানান।