খাগড়াছড়িতে সৎ মায়ের নির্যাতনে ঘর ছাড়া তরুনী গণধর্ষনের শিকার, আটক-৪

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে সৎ মায়ের নির্যাতনে ঘর ছাড়া তরুনী গণধর্ষনের শিকারের ঘটনায় ৪(চার) জন আটক করেছে পুলিশ। জেলাতে এক তরুণী(২০)কে আটকে রেখে গণধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে। টানা কয়েকদিন আটকে রেখে তাকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করিয়ে গনধর্ষণ করা হয় বলে জানায় সে।

কাজ দেয়ার প্রলোভনে তরুনীকে(২০) আটকে রেখে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করানোর ও গণধর্ষনের অভিযোগে আটককৃত ৪জনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার(১৮ই মে) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আটককৃতরা হলেন, আমেনা বেগম, তার মা সেতারা বেগম, শামিমা আক্তার ও তার স্বামী ইসমাইল হোসেন। তারা সবাই একই পরিবারের।

এ সময় প্রায় ১০জন তাকে গনধর্ষণ করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার(১৬ই মে) বিকেলে এক বৃদ্ধ লোক ওই ঘরে গিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।
গত বুধবার(১৭ই মে) বিকেলে অভিযুক্তদের জেলা সদরের গামারীঢালা বটতলা এলাকার তাদের নিজ বাসা থেকে আটক করে পুলিশ।

থানা পুলিশ জানায়, ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে বুধবার বিকেলেই সদর থানায় নিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে রাতেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন ভিকটিম।

ইতো মধ্যে জড়িত বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের রুজু করেছে। ভিকটিম তরুণী খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের গোরাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
ভিকটিম জানায়, সৎ মায়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে গত বৃহস্পতিবার(১১ই মে) জেলার মাটিরাঙ্গার গৌরাঙ্গ পাড়ার বাসা পালিয়ে খাগড়াছড়ি চলে আসে।

শহরের জিরোমাইল এলাকায় এসে একটি ঘরে কাজের সন্ধান করতে থাকে। সেখান থেকে এক নারী চার হাজার টাকা বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে তাকে খাগড়াছড়ি সদর ইউনিয়নের গামারিঢালা বটতলা এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে ওই নারী মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করে।
খাগড়াছড়ি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল’র ভারপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম অফিসার রনজিৎ সরকার ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানায়, ঐ তরুনীকে খুন করে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন জনকে ভিডিও কলে দেখায়।

পরে টানা কয়েকদিন তাকে বিভিন্ন লোক এসে খারাপ কাজ করে। এ সময় প্রায় ১০জন তাকে ধর্ষণ করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার(১৬ই মে) বিকেলে এক বৃদ্ধ লোক ওই ঘরে গিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। পরে পাশে বাজারে আসলে এক আপাকে ঘটনাাট খুলে বললে তিনি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান।

স্থানীয় বিচিতলা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা সুমি আক্তার তরুণীকে নিজ বাসায় নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, বিকেল ৫টায় বাজার করে ফেরার পথে মেয়েটিকে দেখতে পাই। তাকে কোত্থেকে আসছে জানতে চাইলে সে কান্নাকাটি করে এবং বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমি তাকে বাসায় নিয়ে আসি। পরে সে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। বিষয়টি আমার এক আপার সঙ্গে পরামর্শ করে সকালে দুইজন মিলে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।

জিরো মাইল প্রথমে যে বাসায় মেয়েটি কাজের সন্ধানে যায় সে বাসার মালিক মাওলানা শফিকুল ইসলাম আলী বলেন, আমার স্ত্রীর কাছে এক মেয়ে কাজের সন্ধানে আসে। তার সাথে একজন মধ্য বয়স্ক নারীও ছিল। ওই নারী মেয়েটিকে কাজে রাখার বিনিময়ে ১০হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তুু এত টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই, তাছাড়া মেয়েটিকে অপ্রকৃতস্ত’ মনে হওয়ায় আর রাখিনি। এরপর তারা চলে যায়।

ঘর থেকে পালানো বিষয়ে ভিকটিম তরুণী আরো জানায়, ছোট বেলায় তার মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আরেকটি বিয়ে করে। যখন তখন সৎ মা তাকে নির্যাতন করতো। নির্যাতনের ঘটনায় সৎমা জেলও খাটেন। চার মাস আগে বাবা আত্মহত্যা করেন। এরপর নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।

খাগড়াছড়ি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল ভারপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম অফিসার রনজিত সরকার এ ঘটনাকে চা ল্যকর ও অমানবিক দাবী করে বলেন, অভিযুক্তরা যাতে দ্রæুত আইনের আওতায় আসে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের যেন বিচার হয়।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আরিফুর রহমান মুঠোফোনে ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পরপরি জড়িত ৩জনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্য জড়িতদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনায় মানব পাচার দমন আইনে মামলা দায়েরের রুজু করে আরো তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা বলেন, ভিকটিম বিলকিছ আক্তারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আসামিদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

এ ঘটনায় রাতেই সদর থানায় মানব পাচার দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক ৪জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।