খাগড়াছড়িতে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, দুই দিনে ২শ ৬২জনকে জরিমানা, ১৫জনের কারাদন্ড

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। ১৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা।

এ সময় তারা জনগণকে সচেতন করতে নির্দেশনা ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করছেন দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। গণপরিবহণ, দোকানপাট বন্ধ রাখা ও অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মাস্ক পরিধানে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে প্রশাসন। তারপরও নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। এ কারণে জরিমানাও গুনতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দুই দিনের কঠোর লকডাউনে বিধি ভঙ্গের অপরাধে খাগড়াছড়িতে ২শ ৪৮টি মামলায় ২শ ৬২জনকে ৭২হাজার ১শ ২০টাকা জরিমানা করেছে। এছাড়া ১৫জনকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

খাগড়াছড়ি সদর জোনের ক্যাপ্টেন মো: ফাহিম ফয়সাল সামিন জানান, সরকার ঘোষিত লকডাউন পালন নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে জনগণের সহযোগিতায় লকডাউনের নির্দেশনা যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে যেন করোনা সংক্রমণ রোধ করা যায় সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

দীঘিনালা উপজেলা:

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়ন ও জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশিত এবং সংক্রমণ্র প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন। দীঘিনালা উপজেলায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি যৌথভাবে কাজ করছে দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ। শনিবার সকালে দীঘিনালার বোয়ালখালী সাপ্তাহিক হাটে আসা জনসাধারণকে মাইকিং এর মাধ্যে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাচলের অনুরোধ জানান রোভার স্কাউট সদস্যরা। উপজেলা সদর, কলেজ গেইট ও লারমা স্কয়ার এলাকায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক ব্যপক সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালায় প্রশাসন ও রোভার সদস্যরা।

শনিবার(৩রা জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার বোয়ালখালী বাজার পরিদর্শনে আসেন দীঘিনালা সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো: রেজওয়ানুজ্জামান খাঁন পিএসসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ ও দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ এ.কে.এম পেয়ার আহাম্মদ। খাগড়াছড়ি জেলা রোভারের সাবেক সিনিয়র রোভার মেট ও জেলা রোভারের মিডিয়া টীমের অন্যতম সদস্য মো: সোহানুর রহমানের নেতৃত্বে কার্যক্রমে অংশ নেয় দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপের ১০জন রোভার সদস্য।

খাগড়াছড়ি জেলা রোভার স্কাউট লিডার ও মিডিয়া টিমের সমন্বয়ক মো: দিদারুল আলম(রাফি) জানান, ‘খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলায় রোভার স্কাউট সদস্যরা প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি সচেতনতার বার্তা ব্যপক প্রচারের বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

মানিকছড়ি উপজেলা:

করোনার চলমান লকডাউনে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও মাস্ক পরিধান না করে অবাধে ঘোরাফেরা করায় মানিকছড়িতে ৩দিনে ২৭টি মামলায় ৩হাজার ৭শ টাকা জরিমানা আদায় করেছে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, লোকালয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক পরিধান না করায় ১-৩জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না মাহমুদ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮ অনুযায়ী ২৭টি মামলায় ৩হাজার ৭শ টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করলে নিয়মিত অভিযান চলবে বলে নিশ্চিত করেন তামান্না মাহমুদ।

মহালছড়ি উপজেলা:

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ৭দিনের জন্য ঘোষিত কঠোর লকডাউন ৩য় দিনেও প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে লকডাউন চলমান রয়েছে। মহালছড়ি বাজারের দোকানপাটগুলিতে কিছু সংখ্যক ক্রেতা বিক্রেতার আনাগোনা পরিলক্ষিত হলেও অন্যান্য দিনের তুলনায় জনসমাগম একেবারেই কম। অভ্যন্তরীন কিছু টমটম ও ব্যক্তিগত মোটরবাইক চলাচল করলেও দূরপাল্লার যানবাহন রয়েছে বন্ধ। এদিকে ২৪মাইল নামক চৌরাস্তার মুখে পুলিশের চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতে সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে।

মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবাইদা আক্তার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া জানান, কঠোর লকডাউন চলাকালে এখন পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় ভাবে কিছু সংখ্যক লোকজন রাস্তায় ঘোরাফেরা করার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩২জনকে বিভিন্ন মেয়াদে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।

আগামী ৭ই জুলাই ও বর্ধিত পরবতী ১৪জুলাই পর্যন্ত চলমান লকডাউন চলাকালীন সময়ে যে কোন ব্যক্তি অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও যে কোন দন্ডে দন্ডিত করা হবে। তাই সকলকে প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা:

সারাদেশের সাথে পাল্লা দিয়ে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাতেও হু হু করে বাড়ছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। করোনার থাবা যেন প্রতিদিনই বিস্তুৃতি লাভ করছে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে সরকারের সিদ্ধান্ত ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কঠোর লকডাউন কার্যকরে গত বৃহস্পতিবার(১লা জুলাই) মাঠে নেমেছে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় মহামারী করোনা ভাইরাসের উর্ধ্বমুখী রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি আর মাস্ক পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে একদল যুবকের সমন্বয়ে গঠিত ‘কুইক রেসপন্স টীম’। দীর্ঘ বিরতির পরে সাম্প্রতিক করোনার সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতার পাশাপাশি তৃনমুলে জনসচেতনতা সৃষ্টি আর মাস্ক পড়তে উদ্বুদ্ধ করাসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য সচেতনতামুলক মাইকিং করবে ‘কুইক রেসপন্স টিম’। এ প্রাতবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার(অ. দা) মিজ ফারজানা ববি।

একদল যুবকের সমন্বয়ে গঠিত কুিক রেসপন্স টিমের প্রধান মো: দেলোয়ার হোসেন রিপন বলেন, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দশ যুবকের সমন্বয়ে গঠিত কুইক রেসপন্স টিমকে আবারো সচল করেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার(অ. দা) মিজ ফারজানা ববি। তার নির্দেশেই আমরা আবারো স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেছি। যেকোন পরিস্থিতিতে এ টিম মাটিরাঙ্গাবাসীর পাশে থাকবে।

প্রসঙ্গত, গেল বছর করোনার প্রদিুর্ভাবের শুরু থেকেই করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন বাস্তবায়ন, করোনায় আক্রান্তদের সহায়তা করা, তৃনমুলে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ হাটবাজারে স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিতে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করে মাটিরাঙ্গার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ।

রামগড় উপজেলা:

জেলার রামগড়ে কড়াকড়ি লকডাউন চলছে। বিধিনিষেধ অমান্য করায় চলমান লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার(২রা জৃুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রামগড় পৌর এলাকায় ২৯ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতে ২৯টি মামলা রুজু করে মোট ১৭হাজার ২০০টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। সকাল হতে মুদি দোকান, ঔষধের ফার্মেসি ও কাঁচামালের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে । দুইজন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক এলাকায় অভিযানে রয়েছেন।

শুক্রবার বিজিবির টহলদলও মাঠে নামে। রাস্তায় বের হলেই পুলিশের জেরার মুখে পরতে হচ্ছে মানুষকে। শহরজুড়ে এখন নিরব নিস্তব্ধ অবস্থা বিরাজ করছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে কম মানুষই। বৃহস্পতিবার(১লঅ জুলাই) সকালে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু.মাহমুদ উল্লাহ মারুফের নেতৃত্বে লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রামগড় বাজার, সোনাইপুল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সারাদিন অভিযান পরিচালনা করেন। এছাড়া নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) শিরিন আকতারও অভিযান পরিচালনা করেন। সকাল হতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে ২৯ব্যক্তিকে আটক করা হয়। সন্ধ্যায় পুলিশ আটককৃতদের উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করে। সরকারি বিধিনিষেধ ভঙ্গের অপরাধে আটককৃতদের বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা রুজু করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালত আটককৃত ২৯ব্যক্তিকে সর্বমোট ১৭হাজার ২০০টাকা অর্থদন্ড করেন।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, চলমান লকডাউন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। তিনি বলেন, এখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ তৎপর রয়েছে । বাহিস্র্থান হতে রামগড়ে প্রবেশরোধে বিভিন্ন প্রবেশ পথে পুলিশের বিশেষ চৌকি বসানো হয়েছে।