খাগড়াছড়িতে বাসে তুলে কিশোরীকে ধর্ষণ, আটক-২

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে বাসে তুলে ১৪বছরের এক মারমা কিশোরীকে(১৬) গণধর্ষণের অভিযোগে দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত দু’জনকে আটক করেছে।

শনিবার(৩রা জুলাই) ভোর ৪টায় খাগড়াছড়ি পরিবহন টার্মিনালে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ওই কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভোর ৬টার দিকে বাস টার্মিনাল থেকে অভিযুক্তদের আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় কিশোরী বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মারমা স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আটকরা হলেন, খাগড়াছড়ির  জেলা সদরের উত্তর গঞ্জপাড়া এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে মো: কামাল মিজি(২৯) ও হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মো: রফিকুল ইসলাম(২৫)। এদের মধ্যে কামাল বাসের শ্রমিক ও মো: রফিকুল ইসলাম বাস টার্মিনালে অবস্থিত একটি দোকানের মিস্ত্রী। কামাল খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম লোকাল বাসের শ্রমিক এবং রফিক বাস টার্মিনালে তার ভাইয়ের দোকানে কাজ করেন।

জানা যায়, শুক্রবার(২রা জুলাই) ধর্ষনের ভুক্তভোগী কিশোরী পড়ালেখা না করায় মা তাকে বকা দেন। এতে রাগ করে গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে। এরপর হেঁটে খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছালে দুই যুবক তাকে জোর করে বাসে তুলে ধর্ষণ করেন। এসময় মেয়েটি ছাড়া পেয়ে দৌড় দিলে তাকে আবারও ধরে আরেকটি বাসে তুলে ধর্ষণ করা হয়।

পরে ধর্ষণের শিকার কিশোরী খাগড়াছড়ি সদর থানায় গিয়ে বিষয়টি জানায়। এরপর শনিবার ভোর ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক(এসআই) জাহেদুল কাদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম বাস টার্মিনাল থেকে দুই যুবককে আটক করে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের বাস টার্মিনালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ পরিবহন শ্রমিক খাগড়াছড়ি সদরের আলী আহমদের ছেলে কামাল মিজি ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে গদি মিস্ত্রি রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ধর্ষণের কাজে ব্যবহৃত দু’টি বাস জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার রাতে পরিবারের সাথে টেলিভিশন দেখা নিয়ে অভিমান করে জেলা সদরের গুগড়াছড়ির বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ধর্ষণের শিকার কিশোরী। রাত ৩টার দিকে বাস টার্মিনাল এলাকায় ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক বাসে তুলে গণধর্ষণ করে গ্রেপ্তারকৃতরা।

খাগড়াছড়ি বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রতন ত্রিপুরা জানান, লক ডাউনের কারণে অন্যান্য বাসের মতো এই বাসটিও টার্মিনালে ফেলে ড্রাইভার বাড়িতে চলে যান। বাসটির হেলপারসহ আরেকজন ঘটনাটি ঘটায়।

এদিকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা রোববার(৪ঠা জুলাই) এক বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনালে মারমা এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও আটককৃতদের দৃষ্টাস্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত শনিবার(৩রা জুলাই) পারিবারিক সমস্যার কারণে এক মারমা স্কুল ছাত্রী গুগড়াছড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বাস টার্মিনালে পৌঁছান। এসময় আনুমানিক ভোর ৩টার দিকে বাসে তুলে কয়েকজন মিলে তাকে গণধর্ষণ করে। পরে ধর্ষিতা থানায় গিয়ে বিষয়টা পুলিশকে জানালে ধর্ষক বাস হেল্পার মো: কামাল মিজি ও মো: রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।

কোভিড-১৯ অতিমারীর ফলে সারাদেশে কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রশাসন তৎপর থাকা সত্বেও খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনালে গণধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় প্রশাসন ও বিচারে পক্ষপাতিত্বের কারণে অপরাধী গ্রেফতার হলেও দৃষ্টাস্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হয় না, অপরাধীরা সহজে ছাড়া পেয়ে যায়।

উল্লেখ্য, গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ইং খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের প্রচেষ্টাকারী স্কুল শিক্ষক সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং অন্যান্য ধর্ষণ ও ধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টাস্তমূলক কোন শাস্তি প্রদান করা হয়নি।

খাগড়ছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুহাম্মদ রশীদ বলেন, ভোরে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ টার্মিনাল এলাকা থেকে অভিযুক্তদের আটক করেছে। প্রথমে একটি বাসে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আটক কামাল যে বাসটির হেলপার সেই বাসে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। বাস দু’টি আলামত হিসেবে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। এর আগে ভিকটিম থানায় এসে অভিযোগ করার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছে। ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে মামলার রুজু করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।