খাগড়াছড়িতে জরিমানা করেও মানানো যাচ্ছে না লকডাউন!

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে লক-ডাউন চলছে। দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণের ঢেউ সামলাতে সরকার সারাদেশে ৫ই এপ্রিল থেকে ৭দিনের লক-ডাউন দিলেও জেলা ৯টি উপজেলাতে পালিত হচ্ছে ঢিলেঢালা ভাবে। শহরে চলছে মাইকিং। চলছে না দূরপাল্লা গাড়ি-যান। অথচ তারপরও রাস্তায় নেমে জমায়েত হচ্ছেন লোকজন। ভিড় করছেন অযথা। পাহাড় বেষ্টিত খাগড়াছড়িতে দেখা যাচ্ছে এমনই দৃশ্য।
করোনার এই দু:সময়েও সচেতন নয় এখানকার ছোট বড় কেউই। সেনাবাহিনী, প্রশাসন কিংবা স্থানীয় সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের জন্য কাজ করে গেলেও তাতে গা মাখছেন না পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ। আর তাদের অসচেতনতার কারণেই এই অঞ্চলে বেড়ে চলছে করোনার রোগি। আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক মানুষ। আন্ত: প্রধান সড়কের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অলিগলির দোকানপাট খোলা রয়েছে আগের নিয়মে। সামাজিক ও স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে সাপ্তাহিক হাটবারকে ঘিরে বসতে দেখা গেছে হকারদের। ক্রেতাদের অনেকে মাস্ক পরলেও বিক্রেতারা এ ক্ষেত্রে উদাসিন। জেলায় এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের হার কম থাকলেও এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা করছেন অনেকে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় গতকাল রোববার জেলার বিভিন্ন স্থানে ১২২জনকে অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই চলছে স্থানীয় প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও সচেতনতার বালাই নেই খাগড়াছড়িতে। জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনের চিত্র হতাশজনক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জেলা পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযান, জরিমানা, মাইকিংয়ের পরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ এখনো মাস্ক ব্যবহার করছে না। জেলাজুড়ে মানুষের উপস্থিতিও স্বাভাবিক। এতে জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লকডাউনের দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ ছাড়া বাকি সব কিছুই অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলছে।
অপরদিকে খাগড়াছড়িতে নতুন করে আরো ১০জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫জন। যাদের মধ্যে দু‘জন হাসপাতালে এবং বাকি ৪৩জন নিজ নিজ বাসায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এখন পর্যস্ত মোট ৫হাজার ৪শ ৫১জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫৫জন ব্যক্তির শরীরে করোনা ধরা পড়ে। ইতোমধ্যে ৮১০জন সুস্থ হয়েছেন।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা: নূপুর কান্তি দাশ জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এখনো সবাই স্বাস্থ্যবিধি ভালো করে মানছেন না। এতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কথা ছিল সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি কাঁচাবাজার, মুদি দোকানসহ জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব বন্ধ থাকবে। তবে এই নির্দেশনা মানছেন না খাগড়াছড়ির অধিকাংশ ব্যবসায়ী। দোকান কিছুটা খোলা রেখে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা। হাটবাজারেও মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম।
অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তৎপর খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৩৯টি মামলায় ৩২হাজার ৮০টাকা জরিমানা আদায় করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখলেই মানুষ মাস্ক মুখে দেয়। কিন্তু সব সময় পরার বিষয়টি উপেক্ষিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখলেই মানুষ মাস্ক মুখে দেয়। কিন্তু সব সময় পরার বিষয়টি উপেক্ষিত।
সরজমিনে দেখা যায়, খাগড়াছড়িতে লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে চলছে। জেলা ৯টি উপজেলাতে জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত অন্য দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বাইরে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বরাবরের মতই আছে। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও অভ্যন্তরীণ সড়কে যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন মানতে এবং বাইরে অযথা ভিড় না করতে মাইকিং করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ রশিদ জানান, আমরা মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতনতা মানার অনুরোধ করছি। শহরে মাইকিং করা হচ্ছে।
সচেতন মানুষরা জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও সচেতনতার বালাই নেই খাগড়াছড়িতে। জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনের চিত্র হতাশজনক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জেলা পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযান, জরিমানা, মাইকিংয়ের পরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না।অধিকাংশ মানুষ এখনো মাস্ক ব্যবহার করছে না। জেলাজুড়ে মানুষের উপস্থিতিও স্বাভাবিক। এতে জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে জেলা রামগড় উপজেলায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মানতে অনিহা, মাস্ক না পড়া,স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মোটর সাইকেল চালকদের হেলমেট না থাকা ও পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানোসহ আইন না মানায় ১৮জন’কে ৬হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। সোমবার(৫ই এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রামগড় বাজারে মাস্ক না পরা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানা আদায় করা হয়। এসময় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ১৮টি মামলায় ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন, রামগড় উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট মু.মাহমুদ উল্লাহ মারুফ। ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা গেছে, সরকার ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও নানা অজুহাতে অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। তাই ঘরের বাইরে সবার মূখে মাস্ক পরা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট মু.মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন, করোনার প্রাদুভাব প্রথম বারের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউ আরো প্রকট আকার ধারন করছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত আর মত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। করোনা ভাইরাস(কোভিড-১৯) থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। লকডাউনে সরকারি নিদের্শনা না মানা হলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।