খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফ সদস্য নিহত-১,আহত-১

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা তাইন্দং এলাকায় এক ইউপিডিএফ সদস্য নিহত হয়েছেন। সোমবার(১৮ই জুলাই) সকালে আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের সুকুমার কারবারি পাড়ায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের সদস্যদের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

এ সময় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। নিহতের নাম উত্তম কুমার ত্রিপুরা(২৫)। তিনি স্থানীয় হেডম্যান পাড়ার সুনীল ত্রিপুরার ছেলে। নিহত ব্যক্তি ইউপিডিএফ প্রসিত গুরুপের সদস্য। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চিগন চিজি চাকমা(২৪) ওরফে ওদুদ ত্রিপুরা নামে এক ইউপিডিএফ কর্মী।

ইউপিডিএফে’র জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সকালে সরকারের সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেওয়া মুখোশধারীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে স্থানীয় যুবক উত্তম কুমার ত্রিপুরাকে হত্যা করে। মূলত: রাষ্ট্রীয় মদদ পুষ্ট সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় পুলিশ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। প্রতিপক্ষের গুলিতে একজন মারা গেছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছে একজন। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার ইউপিডিএফ মূল দল ও অপর আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোলাগুলিতে ১জন নিহত হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা ভারী অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে বিজিবির যামিনীপাড়া জোনের একটি টহল দল।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ ও অপর আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাটিরাঙ্গায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ১জন নিহত হয়। পাহাড়ে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে সোমবার(১৮ই জুলাই) ভোরে মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ের সুকুমার কার্বারীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ভোর পাঁচটার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার ইউনিয়নের তানাক্কা পাড়া বিজিবি ক্যাম্পের অদূরে ইউপিডিএফ মুল ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী এই বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

জামিনীপাড়া বিজিবি জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল এবিএম জাহিদুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইউপিডিএফ প্রসিত ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসীর নাম ওদুদ ত্রিপুরা(২৭), পিতা-সুনেল চাকমা, মাতা শান্তি রাণী ত্রিপুরা। নিহত সন্ত্রাসী সুকুমার ত্রিপুরা কারবারি পাড়া, ৫নং ওয়ার্ড, ১নং তাইনদং ইউনিয়ন, উপজেলা মাটিরাঙ্গা, জেলা-খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বাসিন্দা। তিনি ইউপিডিএফ মূল দলের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন বাঙ্গালীদের চাষাবাদে বাধা দেয়া, চাঁদা দিতে বাধ্য করা, কচু বাগান কেটে ফেলাসহ নানা অভিযোগ ছিল।

বিজিবি ঘটনাস্থলে আরো তল্লাশি চালিয়ে একটি একে ২২রাইফেল, দুইটি মগ, একটি মোবাইল ফোন, একটি চাঁদা আদায় রশিদ বই, ৩রাউন্ড একে-২২রাইফেলের গুলি, দুইটি ম্যাগজিন, ২১রাউন্ড গুলির খোসা, একটি হাতব্যাগ, একটি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ব্যানার উদ্ধার করে।

এদিকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন তাইন্দং ইউনিয়নে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় উত্তম ত্রিপুরা নামে একজন ইউপিডিএফ সমর্থক নিহত ও একজন সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে হামলাকারী খুনীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার ১৮ই জুলাই ২০২২ সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ভোর ৫টার দিকে দুর্জয় চাকমার নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের ৬জনের একটি দল মাটিরাঙ্গা উপজেলার ১নং তাইন্দং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ায় সুনীল ত্রিপুরার বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের এলোপাথারি গুলিতে তার ছেলে উত্তম ত্রিপুরা(২৫) ঘটনাস্থলে নিহত ও চিগনচিজি চাকমা(২৪) নামে ইউপিডিএফের এক কর্মী আহত হন।

আহত ইউপিডিএফ সদস্যের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ১নং লোগাং ইউনিয়নে ধুধুকছড়া গ্রামে। তার পিতার নাম তুঙ্যা চাকমা। তিনি সাংগঠনিক কাজে তাইন্দং-এ থাকেন এবং উত্তম ত্রিপুরাদের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন।

অংগ্য মারমা সরকার ও সেনাবাহিনীর কড়া সমালোচনা করে বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে আস্ফালন ও ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের’ জন্য সেনা অভিযানের কথা বললেও বাস্তবে তারাই সন্ত্রাসীদের লালন পালন করছে এবং তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে পাহাড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অপরদিকে তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংগ্রামরত ইউপিডিএফের নেতাকর্মীদের উপর অবর্ণনীয় দমনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে।

পাহাড়ে খুন, সন্ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতির জন্য সরকারের গৃহীত ভুল নীতিকে দায়ি করে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, সন্ত্রাস দমনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপন কিংবা এপিবিএন ক্যাম্প নির্মাণ নয় বরং এজন্য যা করতে হবে তা হলো নব্যমুখোশ বা পাহাড়ি রাজাকার নামে পরিচিত সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দলগুলোকে ভেঙে দিয়ে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের আস্তানায় পরিণত হতে না দেয়া।

কারা পাহাড়ে সন্ত্রাস করছে, কারা তাতে উস্কানি ও মদদ দিচ্ছে এবং কোন দলের বিরুদ্ধে এই সন্ত্রাসকে চালিত করা হচ্ছে তা সবার কাছে স্পষ্ট বলে মস্তব্য করে তিনি বলেন খুন, সন্ত্রাস ও দমনপীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে পরিচালিত গণআন্দোলনকে কখনই দমন করা যাবে না। তিনি অবিলম্বে উত্তম ত্রিপুরার খুনীদের গ্রেফতার এবং পাহাড়ি রাজাকারদের মদদ দেয়া বন্ধ করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)’র প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ ও প্রতিপক্ষ দলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হয়। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি একে ২২রাইফেল, দুইটি মগ, একটি মোবাইল ফোন, একটি চাঁদা আদায় রশিদ বই, ৩রাউন্ড একে-২২ রাইফেলের গুলি, দুইটি ম্যাগজিন, ২১রাউন্ড গুলির খোসা, একটি হাতব্যাগ, একটি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ব্যানার উদ্ধার করে।