খেটে খাওয়া মানুষদের কথা স্মরণ করে যা বললেন মাশরাফি

ক্রিকেট ঘিরে গড়ে ওঠা দেশপ্রেম কী, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি মনে করেন ক্রিকেটাররা নন; মুক্তিযোদ্ধা, ডাক্তার এবং শ্রমিকরাই হচ্ছেন আসল হিরো।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে ম্যাচ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচ ঘিরে চারদিকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘যুদ্ধে’ নামে বাংলাদেশিরা। ওই পরিস্থিতি দেখেই বিদেশি একটি পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে মাশরাফি এসব কথা বলেন।

এই প্রথম নয়। এমন কথা মাশরাফির মুখ থেকে আগেও শোনা গেছে।

‘আমি একজন ক্রিকেটার। কিন্তু আমি কি কারো জীবন বাঁচাতে পারি? একজন ডাক্তার পারেন।

কিন্তু দেশের সেরা ডাক্তারের জন্য কেউ তালি দেয় না। তাদের প্রশংসা করুন। তারা আরও জীবন বাঁচাবে। তারাই তারকা।’ বলেন মাশরাফি।

খেটে খাওয়া মানুষদের কথা স্মরণ করে অধিনায়ক বলেন, ‘শ্রমিকরাও তারকা। তারা দেশ তৈরি করেন। ক্রিকেট দিয়ে আমরা কী করি? একটা ইটও কি আমরা তৈরি করতে পারি? খেলার মাঠে কী খাদ্যশস্য হয়? ’

ক্রিকেটারদের শিল্পীর সঙ্গে তুলনা করেন মাশরাফি, ‘আমরা কী করি? টাকা নেই, পারফর্ম করি। গায়ক অথবা অভিনেতার মতো। বেশি কিছু তো নয়।’

মাশরাফির চোখে নায়ক তারা, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা টাকার জন্য বন্দুকের সামনে যাননি। তাদের সঙ্গে কার তুলনা চলে? ক্রিকেটে যদি কোনও নায়ক তাকে, তাহলে তিনি রকিবুল হাসান অথবা শহীদ আব্দুল হালিম জুয়েল। রকিবুল ভাই ব্যাটে জয়বাংলা লিখে খেলতে গিয়েছিলেন। সেটাই বড়।’

‘শহীদ জুয়েল যুদ্ধে যাওয়ার জন্য খেলার মাঠ ছেড়েছিলেন। ওটাকেই সাহস বলে। ফাস্ট বল মোকাবিলা করায় রোমান্টিসিজম এবং দায়িত্ব আছে। বীরত্বের কিছু নেই।’

‘ক্রিকেট ঘিরে যারা দেশপ্রেম দেশপ্রেম বলে কাঁদে, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, তারা যদি একদিন রাস্তায় কলার খোসা না ফেলে অথবা ট্রাফিক আইন মেনে চলত তাহলে দেশ পাল্টে যেত। এই বিশাল এনার্জি ক্রিকেট ঘিরে নষ্ট না করে প্রতিদিনের কাজ সততার সঙ্গে করলে হয়। তাতেই দেশপ্রেম প্রকাশ পাবে। ওইসব লোক দেশপ্রেম বলতে কী বোঝে, আমি সেটা বুঝি না।’
মাশরাফি বোঝেন না। কিন্তু ঠিকই বুঝিয়ে দিয়ে যান, মাশরাফিয় দেশপ্রেম কী!