গাইবান্ধার শিমুলিয়ায় ব্রীজ ভেঙ্গে দরপত্র ছাড়াই কোটি টাকার মালামাল লুটপাটের অপচেষ্টা

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীর শিমুলিয়া বাজার সংগ্লন্ন দরপত্র ছাড়াই পুরাতন ব্রীজ ভেঙ্গে পুরাতন ব্রীজের মালামাল মাটি ও ইট গুলো এ্যাপ্রোস সড়ক নির্মাণে ব্যবহার ও মালামাল গুলো লুট করার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের ও উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় প্রকৌশলী অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পলাশবাড়ী উপজেলা হেড কোয়াটার থেকে চতরা জিসি রোড ভায়া কিশোরগাড়ী রোডে ১৯০০ মিটার চেইনেজে শিমুলিয়া নামক স্থানে ৩০.০৬ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডার ব্রীজ আইডি নং- ১৩২৬৭২০০৪০২ এর নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪ শত ২৮ টাকা চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়। উক্ত ব্রীজ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরাতন ব্রীজটি ভেঙ্গে পুরাতন ব্রীজের মালামাল নিজ দায়িত্বে রেখে নির্ধারিত তারিখে নিলামের ক্রয় কারী প্রতিষ্ঠানের নিকট বুঝিয়ে দিবে।

অথচ উক্ত ব্রীজটি নির্মাণের জন্য নির্ধারিত মেসার্স বসুন্ধরা হাউস বিল্ডার্স ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও কাজটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় তুলসীঘাটের জনৈক রায়হান নামের এক সাব-ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেন। উক্ত স্থানে পূর্বের পুরাতন ব্রীজটি নিলামের মাধ্যমে অপসরণের নির্দেশ থাকলেও রায়হান ঠিকাদার রাজস্ব ফাঁকির উদ্দেশ্যে স্বল্প মূল্যে ব্রীজটি নিলামে নেয়ার জন্য সুকৌশলে এক মাস পূর্বে ব্রীজটি ভাঙ্গা শুরু করেন।

এবং ব্রীজের পাশে এপ্রোস রোড নির্মাণে উক্ত ব্রীজের ইট, মাটি,রড,বালু ও সিমেন্ট গুড়া ব্যবহার করায়। স্থানীয় জনগণ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পলাশবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার ও গাইবান্ধা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলামের নির্দেশে পুরাতন ব্রীজটি ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ৭ নভেম্বর ব্রীজের মালামাল নিলামে বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আগামী ২১ নভেম্বর গাইবান্ধা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে উম্মুক্ত নিলামে মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এমতাবস্থায় প্রথম থেকে পুরাতন ব্রীজের চারপাশে গার্ডারের ইট,মাটি,রড,৮ নভেম্বর পূনরায় নিলাম ছাড়াই রায়হান ঠিকাদার ব্রীজটি ভাঙ্গা শুরু করে।

উপজেলা প্রকৌশলী সংবাদ পেয়ে পূনরায় ব্রীজটি ভাঙ্গা বন্ধের মৌখিক নির্দেশ প্রদান করেন। এমতাবস্থায় ৯ নভেম্বর স্থানীয় পত্রিকায় ২১ নভেম্বর ব্রীজটি নিলামের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রায়হান ঠিকাদার সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় ৯ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকে পূনরায় উক্ত ব্রীজটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করে। উপজেলা প্রকৌশলী খবর পেয়ে ব্রীজ ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরে আবারও ব্রীজটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছেন রায়হান ঠিকাদার।

ব্রীজটি নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মের্সাস বসুন্ধরা হাউস বিল্ডার্সের পরিচালকের পক্ষ হতে মোবাইল নাম্বারে ফোন কলে জানান,আমাদের সিডিউলে পুরাতন ব্রীজটি ভেঙ্গে এর মালামাল একত্রিত করে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে৷ পুরাতন ব্রীজের মালামাল এ্যাপ্রোস সড়ক নির্মাণে ইট মাটি ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,পুরাতন ব্রীজ ভেঙ্গে মালামাল নির্মাণাধীন ব্রীজের পাশে সংরক্ষণ করা হবে পরে নিলামকারীকে বুঝিয়া দেওয়া হবে।

এবিষয়ে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও উপজেলা প্রকৌশলী শাহরিয়ার নিলামের কপি তুলে দিয়ে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা দেখার অনুরোধ জানিয়ে এর বাহিরে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এব্যাপারে গাইবান্ধা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম জানান,পুরাতন ব্রীজটি নিলামের আগেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অপসরণ করে এ ব্রীজের মালামাল মজুদ রাখবে। পরে উক্ত মালামাল নিলামে ক্রয় কারি প্রতিষ্ঠান কে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকিবেন।

উল্লেখ্য,ব্রীজটি নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পলাশবাড়ী উপজেলা হেড কোয়াটার থেকে চতরা জিসি রোড ভায়া কিশোরগাড়ী রোডে ১৯০০ মিটার চেইনেজে শিমুলিয়া নামক স্থানে ৩০.০৬ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪ শত ২৮ টাকা চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ ব্রীজ নির্মাণে গত ২০ জুন ২০২২ হতে কাজ শুরু ও আগামী ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশনা সহ প্রকল্পের তথ্য সম্বলিত সাইন বোর্ড দেখে আর নির্মাণস্থলের অবস্থা

দেখে যে কারো চোখ ছানা বড়া হয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে পুরাতন ব্রীজ অপসারণের কয়েকবার চেষ্টা করে পুরাতন ব্রীজের ইট,মাটি,ব্রীজের দুইপাশের রেলিং এর রড এ্যাপ্রোস সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পেটে যাওয়ায় ও ব্রীজের মালামালের সঠিক মূল্য হতে রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ায় জনমনে নানা আলোচনা সমালোচনা চলমান রয়েছে। উক্ত ব্রীজের মালামাল সংরক্ষণ ও পুরাতন ব্রীজের সঠিক মূল্য নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।