গাইবান্ধায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাতিরা!

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দ কোমরপুর গ্রামের কৃতি সন্তান আবু হোসেন সরকার। তিনি ছিলেন পূর্ব বাংলার স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের জন্য সংগ্রাম করা এই মন্ত্রীর নাতিরা এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তারা কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে রয়েছেন।

সারেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক ছিলেন। এই তিন ছেলে-মেয়েও মারা গেছেন অনেক আগে। আহম্মদ হোসেন সরকার নামের এক ছোট ভাই ছিলো তাঁর। এই আহম্মেদ হোসেন সরকারের তিন ছেলে-এমদাদ হোসেন সরকার, মোজাম্মেল সরকার, আবুল কাশেম সরকার ও মেয়ে থেলীমাই বেগম। এদের সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের রেখে যাওয়া সন্তানরা জীবিত রয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে আবু হোসেন সরকারের ভাতিজা মোজাম্মেল সরকার ও আবুল কাশেম সরকারের নাতিদের সংসার চলছে নানা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। যেন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাদের। জীবিকার তাগিদে এই দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ চালাচ্ছেন সিএনজি, কেউবা গার্মেন্টস শ্রমিক আবার অনেকে কৃষকের মাঠে কাজ করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন। যেনো জীবন যুদ্ধে পরাজিত মুখ্যমন্ত্রীর নাতিরা।

এদিকে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের খোর্দ্দ কোমরপুরের নিভৃত গ্রামাঞ্চলের জন্মভূমিটি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ব্যক্তিই ছুটে আসেন এ গ্রামে। এসময় আগত মানুষরা খুঁজতে থাকেন প্রাক্তন মন্ত্রীর স্মৃতিগুলো। কিন্তু কোন চিহ্নই নেই এখানে। আবু হোসেন সরকারের মৃত্যুর দীর্ঘ ৫২ বছর পার হলেও, তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে পরিবারের পক্ষ থেকে কিংবা সরকারিভাবে কোন কিছুই স্থাপন করা হয়নি জন্মভূমিতে। তবে ইদানিং তাঁর বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে পাকা রাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি গেইট। আর খোর্দ্দ কোমরপুরের বসতভিটা দেখলে মনে হয় না যে, এটি মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের বাড়ি।

শুধু তাই নয়, আবু হোসেন সরকারের বাড়ির দিকে যেতে একমাত্র ভরসা কাঁচা সড়ক। বর্ষা মৌসুমে হাঁটু কাদায় পরিণত হয়। শুষ্ক মৌসুমে ছোট-বড় গর্ত ও ধুলাবালিতে ভরপুর। এ সড়কে চলতে গিয়ে দুর্ভোগে শিকার হচ্ছে মানুষের। রাস্তাটি পাকা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী দাবি জানালেও আজও হয়নি পাকাকরণ কাজ।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের নাতি পিয়ারুল সরকার বলেন, দাদার (আবু হোসেন সরকারের) তৎকালীন কাচারি ঘরটি বিলুপ্তি হওয়ার পর এই জায়গাটিতে একটি টিনসেড ঘর তুলে বসবাস করে আসছি। সংসারের অভাব অনটনের কারণে একমাত্র ছেলে নাকিব সরকারকে তেমন লেখাপাড়া শেখানো সম্ভব হয়নি। এই ছেলেটি এখন একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এর উপার্জনের টাকা দিয়ে কোনমতে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা।

আরেক নাতি শাহী সরকার বলেন, আমার দাদা মরহুম আবু হোসেন সরকারের স্মৃতি ধরে রাখতে আমাদের বাড়ির উঠানে ভিন্ন কিছু স্থাপনের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।