গাইবান্ধায় বর্ষা শুরুর আগেই ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন, দিশেহারা শতাধিক পরিবার

বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের পার ভাঙতে শুরু করেছে। এর মধ্যে কুন্দেরপাড়া এবং খারজানি গ্রামে ভাঙনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে কামারজানি ইউনিয়নে বিলীন হয়েছে নদীপাড়ের ফসলি জমি। ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন শতাধিক পরিবারের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে এসব পরিবার। বাস্তহারা হয়েছেন সরকারি আশ্রায়ণ প্রকল্প ‘মুজিব কেল্লা’র ৫৫টি পরিবার। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ১টি বাজারের প্রায় ৫৫টি দোকান-ঘর।

জানা গেছে, গাইবান্ধা সদরের কামারজানি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী এসব এলাকা ভাঙনপ্রবণ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের কবলে পড়ে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়। কিন্তু এ বছর বর্ষা শুরুর অনেক আগেই এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত এক সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কামারজানি ইউনিয়নের ৫,৬,৭ এবং ৮নং ওয়ার্ডের কুন্দেরপাড়া, বাটিকামারী, কড়াইবাড়ী এবং খারজানি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি।

ভুক্তভোগীরা জানান, হঠাৎ করেই গত সপ্তাহখানেক ধরে ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। নদী তীরবর্তী নিচু চরাঞ্চলের জমিতে পানি উঠতে থাকে। নদীতে পানি বৃদ্ধির পরিমান কম হলেও তীব্র স্রোতের কারনে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্রের পাড়। গত ১০ দিনে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও গাছপালা ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে তুলনামূলক নিচু জমিতে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিলেও বন্যার সময় তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো অন্যের জমিতে অস্থায়ীভাবে ঘর স্থাপন করছেন। আবার কেউ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাৎসরিক ভাড়া হিসেবে নিয়েও ঘর তুলছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙ্গনের শিকার এইসব মানুষ আবাসন, নিরাপদ পানি এবং পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।

কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মোঃ শিপন মিয়া জানান, খারজানিতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মুজিব কেল্লায় আশ্রয় নেয়া ৫৫টি পরিবার এখন বাস্তুহারা। নতুন করে ঘর তৈরি করার মত অর্থ না থাকায় পরিবারগুলো এখন দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে। জরুরিভাবে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ছাড়া তাদের পক্ষে এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।

কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির জানান, কেউ ধারনাই করতে পারেনি এমন কম পানিতে অসময়ে নদী ভাঙ্গন হবে। তাই কোন ধরনের কোন প্রস্তুতিও ছিলোনা। নদী ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলোর সরকারি সহায্যের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি বেসরকারি অথবা ব্যক্তিগতভাবে সকলকে ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবার অনুরোধ জানান।

অন্যদিকে কুন্দেরপাড়া কেবলাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এবং কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি বিদ্যালয় ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় চর এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এবিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল রাফিউল ইসলাম বলেন, খুব শীঘ্রই তাদের সাহায্য-সহযোগিতা পাঠানো হবে।