গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে দুদকে তলব: সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ২২ মে তাকে হাজির হওযার জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবরের ১৫ মে তারিখে স্বাক্ষরিত নোটিশে ২২ মে সকাল ১০টায় জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অভিযোগ সংশিষ্ট রেকর্ডসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয় তাকে।

কমিশন আইনের ১৯ ও ২০ ধারা মতে ‘অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ’ করার জন্য দেওয়া এই নোটিশে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশ থেকে জানা গেছে, অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে টিম লিডার এবং সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমানকে সদস্য করে দুই সদস্য বিশিষ্ট টিম গঠন করে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে অভিযোগ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই বলে গণ্য করা হবে।

২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুদক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়। একই দিন অভিযোগের বিষয়ে দুদক গঠিত অনুসন্ধান টিম গাজীপুরের নগর ভবন, ব্যাংক ও পোশাক কারখানাসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে অনুসন্ধান শুরু করে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম তার প্রায় ৩ বছরের বেশি সময়কালে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়ম করেছেন।

২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার খরচের ভাউচারে অনিয়ম, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া, অনেক সড়কে ইস্টিমেটের অতিরিক্ত সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বাড়িঘর ভাঙা, ভাঙা বাড়িঘরের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয় অনুসন্ধান এবং তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সব ধরনের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্তকালে যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সেসব বিষয়ে মামলা হবে।’

অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গাজীপুর নগর ভবন পরিদর্শন, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন নথিপত্রও সংগ্রহ করেছেন প্রতিনিধি দল।

দুদক সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়টি ব্যাংকে কয়টি হিসাব, কার নামে কীভাবে পরিচালিত হয়েছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের নামে জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্ট খুলে আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্যও পেয়েছে দুদক।

উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতিবছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেদিন তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর আলম। পরে মেয়র পদও হারান তিনি। নিজের ভুল স্বীকার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমার আবেদন করলে শর্ত সাপেক্ষে গত জানুয়ারিতে তাকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু এর চার মাস না যেতেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনি। পরে সেই মনোনয়নপত্র ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে বাতিল করে দেন রিটার্নিং অফিসার। এর পর নির্বাচন কমিশনে আপিল এবং হাইকোর্টে রিট করেও টেকাতে পারেননি প্রার্থিতা। আপিল বিভাগও তার আবেদন খারিজ করে দেন।

সবশেষ গত সোমবার (১৫ মে) জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।