চাঁদপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা কতিপয় শিক্ষক নেতার দৌরাত্ব কমছে না

দীর্ঘদিন চাঁদপুরে প্রাথমিক শিক্ষক নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ক্লাস না নেয়া, গর হাজির থাকা, নানা বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর যোগদান করেছেন ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন। আর তাতে জেলায় কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষকরা আশাবাদী এই কর্মকর্তার হাত ধরেই ফিরবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা। নিয়ন্ত্রিত হবে শিক্ষক নেতাদের দৌরাত্ম্য।

চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন ৭ হাজার ২শ’ ১ জন। বাংলাদেশ প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক সমিতির নাম করে নেতা সেজে জেলায় অসংখ্য শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে ফাঁকি দিয়ে আসছেন। তারা বিদ্যালয় গেলেও শ্রেণিমুখী হন না।

এদের অধিকাংশ উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের আস্থাভাজন হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না বলে জানা গেছে। প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালে প্রত্যেক উপজেলা শিক্ষা অফিসে গেলে এসব নেতার দৌড়ঝাপের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের সাথে সময় কাটাতে দেখা যায়। এছাড়া সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল চালক হয়ে শিক্ষকরা মাসের পর মাস কর্মস্থলে শ্রেণি কার্যক্রম ফাঁকি দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঠকিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক নেতাদের কেউ কেউ শিক্ষা অফিসে কোনো কাজ না থাকলেও সেখানে অলস সময় কাটান। তাদের দায়িত্বহীন আচরণের জন্য তাদের বিদ্যালয়ে কর্মরত অন্য শিক্ষকদেরও শ্রেণি কার্যক্রমে আস্থা দিন দিন কমে আসছে। শিক্ষক নেতাদের এমন ফাঁকিবাজির কারণে ওই সব বিদ্যালয়ে শিখন ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।

বেশ ক’জন প্রধান শিক্ষক জানান, শিক্ষক নেতাদের শ্রেণিমুখী করা যায় না নানা কারণে। দেখা যায়, প্রতিমাসেই কোনো না কোনো উপজেলায় জেলা শিক্ষা অফিসার ভিজিটে যান। এছাড়া ইউআরসির বিভিন্ন প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে এই জেলা কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। তখন কেবল তাকেই ফুল দেয়ার জন্যে মূলত এইসব শিক্ষক নেতা স্ব স্ব ইউআরসি’তে উপস্থিত হন। শিক্ষকদের দাবি, ফুল দিতে কতজনের প্রয়োজন হয়?

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে নবাগত ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন যোগদান করায় এ জেলার ১ হাজার ১শ’ ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা আশাবাদী। তিনি এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহসী পদক্ষেপ নেবেন। একই সাথে তিনি চিহ্নিত ওইসব শিক্ষক নেতাকে সতর্ক করে দ্রত শ্রেণিমুখী করে তুলতে সক্ষম হবেন। জেলায় যেসব জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এমন বিদ্যালয়গুলোতে ৪-৫ জনের বেশি শিক্ষক নেই। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৃষ্টপদ না থাকায় মাতৃত্ব, প্রশিক্ষণ (পিটিআই) ও অবসরজনিত কারণে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকে ২ জন বা তিনজন। এসব বিদ্যালয়ে চিহ্নিত শিক্ষক নেতাদের সমন্বয় বদলি করলে তারা শ্রেণিমুখি হবে বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া এসব শিক্ষক নেতা একই বিদ্যালয়ে যুগের পর যুগ অবস্থান করায় তারা শ্রেণিমুখী হচ্ছেন না বলে সহকারী শিক্ষকরা জানান।

যদি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়গুলোতে চিহ্নিতদের সমন্বয় বদলি কিংবা স্বাভাবিক বদলির মত সাহসী পদক্ষেপ নেন তাহলেই শৃঙ্খলা ফিরবে বলে জানান শিক্ষকরা। আর কমে আসবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি। বিদ্যালয়ে গরহাজির থাকা কিংবা নানা বাণিজ্যের বিষয়টি নাকচ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল বাবুল বলেন, আমি মনে করি আগে শিক্ষক পরে নেতা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া ক্লাসে অনুপস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয় নয় বলে মনে করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ ক্লাসমুখি থাকার চেষ্টা করি।

হাইমচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শেখ আবু জাফরের কাছে তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ক্লাস না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে না যাওয়ার বা ক্লাস না করার সুযোগ নেই। এসব এখন মনিটরিং হয়। আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার ছাড়া অন্য কিছুু নয় বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষক নেতাদের কেউ কেউ ক্লাস না নেয়া বা বিদ্যালয়ে না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি সকল উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নিয়ে মিটিং করেছি। সেখানে আমি নির্দেশ দিয়েছি, স্কুল টাইমে কোনো শিক্ষক নেতা যেনো বাইরে না থাকে। শিক্ষক নেতাদের আগে ক্লাসে থাকতে হবে। এসব ব্যাপারে কোনা শৈথিল্য দেখানো হবে না বলে জানান এ কর্মকর্তা।