‘জলবায়ু চুক্তি ত্যাগ করায় ভুগতে হবে আমেরিকাকেই’

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকা শেষমেশ বেরিয়ে আসায় গোটা বিশ্বে যে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইছে, এবার তার শরিক হলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। অনিবার্য ভবিষ্যতের অশনি সংকেতকে অস্বীকার, অগ্রাহ্য করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করলেন প্রাক্তন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এর জন্য ভবিষ্যতে আমেরিকাকে অনেক হিসেব দিতে হবে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে মার্কিন শিল্পে। কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। যার পরিণতিতে বাড়বে বেকারত্ব।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা আরো বলেন, ‘‘এতে করে গুটিকয়েক পিছিয়ে পড়া দেশের সঙ্গে হাত মেলাল আমেরিকা। তারা অনিবার্য ভবিষ্যতের অশনি সংকেত বুঝতে পারেনি। বুঝতে চায়ওনি। আমেরিকাও সেটাই করল! আর যে ১৯০টিরও বেশি দেশ সেই ভবিষ্যতকে পড়তে পেরেছে, তারাই শিল্পে উন্নত হবে। ওই সব দেশে কাজের সুযোগও বাড়বে। ’’

ঘটনা হল, দীর্ঘ দিনের চেষ্টার পর ২০১৫ সালে আমেরিকাকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অংশীদার করতে বড় ভূমিকা ছিল তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারই। আর সেই সময় প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আলোচনায় আমেরিকার পক্ষ থেকে যিনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, সেই প্রাক্তন বিদেশসচিব জন কেরিও কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের। কেরি বলেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত আমেরিকাকে গোটা বিশ্বে পরিবেশের শত্রু করে তুলবে। আমেরিকার জায়গাটা হবে সেখানেই, যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিরিয়া আর নিকারাগুয়ার মতো দেশ দু’টি। মার্কিন জনগণের জন্য যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ’’

যদিও ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনও সিদ্ধান্তের পিছনে এককাট্টা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারা। পল রায়ান থেকে শুরু করে মিচ ম্যাকোনেল পর্যন্ত। পূর্বতন প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আমেরিকাকে শরিক করার জন্য লড়াই চালাচ্ছিলেন, তখন আমেরিকার বড় বড় শিল্পপতিদের স্বার্থরক্ষা করতে তার তুমুল বিরোধিতা করে চলেছিলেন রিপাবলিকান নেতারাই। তখনও যেমন, এখনও তাই। সব রিপাবলিকানেরই এক অবস্থা।

ওবামা প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খারিজ করে দিয়ে বড় বড় মার্কিন শিল্পপতিদের সাময়িক স্বস্তি দিয়েছেন বলে সব রিপাবলিকান নেতাই আপাতত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাকোনেল বলেছেন, ‘‘এখনই তো এটা করতে হবে! এখন না করলে আর কবে হবে?’’ আরেক রিপাবলিকান নেতা পল রায়ান বলেছেন, ‘‘এটা করে নির্বাচনী প্রচারে মার্কিন নাগরিকদের স্বার্থরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প, তা তিনি রক্ষা করেছেন। এর ফলে, আমেরিকার শিল্প বাঁচবে। মার্কিন নাগরিকদের কাজ হারানোর আশঙ্কা কমবে। কাজের সুযোগও বাড়বে। ’’

তবে ব্যতিক্রম রয়েছেন দু’জন। দক্ষিণ ফ্লোরিডা থেকে মার্কিন কংগ্রেসের দুই রিপাবলিকান সদস্য। কার্লোস কুরবেলো ও ইলিয়েনা রস-লেটিনেন। পরিবেশের কারণেই! আটলান্টিকের পাশেই ফ্লোরিডা। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের জলস্তর হু হু করে বাড়লে, আমেরিকার যে জায়গাগুলি ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা, ফ্লোরিডা তার অন্যতম।

তাই দক্ষিণ ফ্লোরিডার রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য কার্লোস কুরবেলো তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘‘বোধহয় কাজটা ঠিক হল না। আমরা বাশার আল-আসাদের সিরিয়া আর ড্যানিয়েল ওর্টেগার নিকারাগুয়ার সঙ্গে একাসনে বসে গেলাম!’’ কথাবার্তায় উদ্বেগ গোপন রাখেননি দক্ষিণ ফ্লোরিডারই আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ইলিয়েনা রস-লেটিনেনও।

আর ডেমোক্র্যাটরা একজোট হয়ে প্রতিবাদ, সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প বুঝিয়ে দিলেন, তিনি পোপ ফ্রান্সিসের পথে হাঁটতে চান না। কিছু দিন আগে ভ্যাটিকানে গেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি স্মারক উপহার দেন পোপ ফ্রান্সিস। বুঝিয়ে দেন, তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ প্রশমনে আগ্রহী। ’’ সমালোচনা করেছেন ববি স্যান্ডার্সের মতো ডেমোক্র্যাট নেতাও।

শুধু আমেরিকাতেই নয়, সমালোচনা করতে শুরু করে দিয়েছে পরিবেশপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন, আমেরিকায়। আমেরিকার বাইরেও। সমালোচনা করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা