দর্শক টানতে পারছে না ঈদের ছবি?

‘শিকারি’, ‘বাদশা’, ‘নবাব’, ‘বস টু’, ‘বসগিরি’, ‘শুটার’—এই সব ছবি দিয়ে গত দুই বছর ঈদের সময় বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিল। ছবিগুলো থেকে প্রযোজকেরা লভ্যাংশও ঘরে তুলেছেন। সেই সময় অনেকই ঢাকার চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। এমনকি গত রোজার ঈদেও ‘নবাব’, ‘বস টু’ ও ‘রাজনীতি’ ছবি তিনটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড় লক্ষ করা গেছে। কিন্তু এবার ঈদে অনেকটাই ভিন্ন চিত্রের কথা শোনা যাচ্ছে। ঈদের তৃতীয় দিন পরও কিন্তু দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোয় ঈদের ছবি দেখতে এখনো দর্শকের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে না।

চলচ্চিত্র বুকিং এজেন্ট সমিতি, দেশের বিভিন্ন হলের মালিক, হল ব্যবস্থাপক ও ছবির পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘রংবাজ’ ও ‘অহংকার’ ছবিতে কিছুটা দর্শক টানতে পারলেও ‘সোনাবন্ধু’ ছবিতে অনেকটাই দর্শক-খরা যাচ্ছে। চলচ্চিত্র বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি সারোয়ার আলী ভূঁইয়া নিজেও লক্ষ্মীপুরের হ্যাপী, মতলবের কাজলী ও কালিয়াকৈরের সাগর সিনেমা হলে ‘রংবাজ’ ছবিটি সরবরাহ করেছেন। তিনটি হল থেকে ছবিটি দিয়ে গত ঈদের মতো আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারছেন বলে জানান তিনি।

সারোয়ার আলী ভূঁইয়া আরও বলেন, গত ঈদে ‘নবাব’ ছবিটি দিয়ে যে ধরনের ব্যবসা হয়েছে, তা এবার হচ্ছে না। তিন দিন পার হয়ে গেল, ‘রংবাজ’ ছবি থেকে একই সময়ের গত ঈদের ‘নবাব’ ছবির চার ভাগের এক ভাগও ব্যবসা হয়নি এখনো। যৌথ প্রযোজনার ছবি বড় বাজেটের হয়। উন্নত কারিগরি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। পরিচালকের নায়ক-নায়িকা উপস্থাপনের দিকটাও ভালো থাকে। ছবি বেশ ঝকঝকে হয়। গল্প, গান—সবই ভালো থাকে। ফলে দর্শকের আগ্রহ বেশি থাকে। সেদিক থেকে এবার ঈদের ছবি অনেকটাই পিছিয়ে আছে।

মতলবের কাজলী সিনেমা হলের মালিক স্বপন বলেন, গত দুই বছর ঈদে যে ধরনের ব্যবসা হয়েছে, এবার তা হচ্ছে না। ‘রংবাজ’ ছবিটি মোটামুটি হয়েছে, কিন্তু সেভাবে দর্শক আসছেন না ছবিটি দেখতে।

ঢাকার কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহের চিত্র একই রকম। শ্যামলী সিনেপ্লেক্সে চলছে ‘রংবাজ’। হলের ব্যবস্থাপক আহসানল্লাহ জানান, প্রথম দিন চার শো থেকে মোট ৬৫ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় দিন ৮০ হাজার। অথচ গত ঈদে ‘নবাব’ ছবি থেকে প্রথম দুই দিনেই প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ ছিল। প্রতিদিন ৯৫ হাজার টাকা করে টিকিট বিক্রি হয়েছে।

আহসানল্লাহ বলেন, ছবি যে আহামরি হয়েছে তা নয়। ‘নবাব’ ছবির শাকিব খান আর ‘রংবাজ’ ছবির শাকিব খান আকাশ-পাতাল তফাত। ছবির পরিচালকও একটা বড় ব্যাপার।

বলাকায় চলছে ‘অহংকার’। এই হলের ব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জমান জানান, ‘অহংকার’ ছবি মোটামুটি যাচ্ছে। তবে ব্যবসা গত ঈদের তুলনায় ভালো না। কিন্তু ছবির গল্প ভালো। তিনি বলেন, প্রথম দিন দুটি শো চলেছে। দ্বিতীয় দিন চারটি। চার শো থেকে মোট ৯০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। অথচ গত ঈদে ‘বস টু’ ছবি থেকে প্রথম দিনই ১ লাখ ৮০ হাজার, দ্বিতীয় দিন প্রায় দুই লাখ টাকা এসেছিল টিকিট থেকে।

কিন্তু ‘অহংকার’ ছবির পরিচালক সাহাদত হোসেন লিটন বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, ‘এটি ফ্যামিলি সেন্টিমেন্টের ছবি। সব জায়গা থেকেই ভালো খবর পাচ্ছি। দিন দিন দর্শক আরও বাড়বে। ছবিটি এতটাই ভালো যাচ্ছে যে ডেমরা রানীমহল হলের মালিক মনির হোসেন আমাকে জানিয়েছেন, তাঁর হলে টানা এক মাস চালাবেন ছবিটি।’

এদিকে ‘রংবাজ’ ও ‘অহংকার’ ছবি দুটি থেকে ‘সোনাবন্ধু’ ছবিটি পিছিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি সারোয়ার আলী ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ‘সোনাবন্ধু’ ছবিটি মাত্র ৩৫টি হলে মুক্তি পেয়েছে। কিছু হল ছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরেও বেশির ভাগ হলেই ছবিটি ভালো যাচ্ছে না। ভৈরবের মধুমতি হলে ঈদের দিন ‘সোনাবন্ধু’ ছবিতে মাত্র সাত হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। টাঙ্গাইলের মালঞ্চ হলে ঈদের দিন প্রথম দুটি শো দর্শকের অভাবে বন্ধ ছিল।