দিনদিন ভয়াবহ হচ্ছে শব্দদূষণ, অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী

ঢাকায় দিনে দিনে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। গাড়ি বাড়ার সঙ্গে রাজধানীতে বেড়েছে শব্দদুষণের মাত্রা। শব্দদূষণ দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বিপজ্জনক মাত্রার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে নগরবাসী।

চিকিৎসকরা বলছেন, নীরব ঘাতক এ শব্দদূষণের কারণে কানে না শোনা, মেজাজ খিটখিটে, উৎকণ্ঠা, মানসিক অস্থিরতা, স্নায়ুচাপ, ক্ষণস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধি, উচ্চরক্তচাপ, ঘুম না হওয়া ও এক ধরনের শব্দভীতি তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের শব্দদূষণের ফলে কেউ কেউ বধিরও হয়ে যেতে পারেন।

রাজধানীতে শব্দের সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়েছে। গাড়ির হর্ন, অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল ও নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির শব্দ, জেনারেটরের শব্দ, কলকারখানার সৃষ্ট শব্দসহ বিভিন্ন কারণে শব্দদূষণ তৈরি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বছরে কয়েক দিন অভিযান চালায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। কিন্তু বাকি সময় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব ভূমিকা পালন করায় মানুষ সচেতন হচ্ছে না। কারণ, আমাদের দেশে যারা রাস্তায় গাড়ি চালান এবং পথচারী উভয়কে সচেতন করলেও সচেতন না হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। তাই শব্দদূষণে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জরিমানার আওতায় নিয়ে এলে কিছুটা হলেও শব্দদূষণ কমবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষ ৮০ ডেসিবল শব্দের মধ্যে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা কাজ করতে পারে। শব্দের মাত্রা এর বেশি হলে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলে শ্রবণশক্তিতে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের পেশাজীবী সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের (ওএসএইচএ) সুপারিশ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৮৫ ডেসিবল শব্দের মধ্যে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারবে না। তারা বলছে, এ শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবল হলে ২ ঘণ্টা, ১১০ ডেসিবল হলে ৩০ মিনিট ও ১১৫ ডেসিবল হলে মাত্র ১৫ মিনিট কাজ করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) বলছে, ১১৫ ডেসিবলে ২৮ সেকেন্ড, ১১০ ডেসিবলে ৩০ সেকেন্ড, ১০৫ ডেসিবলে ৪ মিনিট, ১০০ ডেসিবলে ১৫ মিনিট, ৯৫ ডেসিবলে ৪৭ মিনিট, ৯০ ডেসিবলে আড়াই ঘণ্টা ও ৮৫ ডেসিবলে ৮ ঘণ্টা থাকা যায়। যদিও ঢাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার কোনো এলাকায়ই শব্দের মাত্রা ১১০ ডেসিবলের নিচে নয়।

বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, এলাকাভেদে শব্দের মানমাত্রা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবেল, রাতে ৪০ ডেসিবেল; আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল; মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবেল, রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ডেসিবেল, রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৭০ ডেসিবেল। এখানে দিন বলতে ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা এবং রাত বলতে রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। শব্দের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ, গাড়িচালক, পথচারী ও শিশুরা।