নওগাঁর বদলগাছীতে কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করার অভিযোগ

অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) নামের স্থানীয়ভাবে ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের ওয়েজ কস্ট এর গৃহিত প্রকল্পের উপকার ভোগী পুরুষ শ্রমিক দিয়ে উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন খানের কনিষ্ঠ পুত্র বদলগাছী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত জায়গায় কাজ করার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ০৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আয়তুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের ওয়েজ কস্ট এর গৃহিত প্রকল্পের তালিকাভুক্ত ইউনিয়নের ০৭নং ওয়ার্ডের ৩/৪ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। উল্লেখিত প্রকল্পের পাশাপাশি ওইসব শ্রমিক দিয়ে বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম খানের বাড়ির ব্যক্তিগত জায়গায় কাজ করান ০৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আয়তুল ইসলাম।

জানা যায়, বদলগাছী কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম খান সদর ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করেন। এই সম্পর্কের জের ধরেই অদ্য (০২ জানুয়ারি) সোমবার ৪০ দিনের কর্মসূচির ৩/৪ জন পুরুষ শ্রমিক দিয়ে শামসুল আলম খানের ব্যক্তিগত কাজ করান। এসময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম খান দাঁড়িয়ে থেকে তার ব্যক্তিগত ঘেরা জমিতে আগাছা পরিস্কার ইট সরানো সহ মাটি কাটা কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কাজ করার সময় কাজের এক ফাঁকে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং অনেকে মৌখিকভাবে অভিযোগও তোলেন বিষয়টি নিয়ে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বদলগাছী কৃষি অফিসের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম খানের বদলগাছীস্থ বাড়ি সংলগ্ন জমিতে ৪০ দিনের কর্মসূচির ৩/৪ জন শ্রমিক সকাল ৮টা হতে বেলা ২টা পর্যন্ত ওই বাড়ির রাস্তা ও নিজের ঘেরা জায়গায় কাজ করায়। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে মেম্বার তার আত্মীয় বি,এস শামসুল আলম খানের ব্যক্তিগত কাজ করছেন। এই ওয়ার্ডে সরকারি অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ ভাঙা-চোরা রাস্তা রয়েছে, সেগুলো সংস্কার না করে তিনি তার আত্মীয় বি,এস শামসুল আলম খানের ব্যক্তিগত কাজ করছেন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিএস শামসুল আলম খান একজন সরকারি চাকুরীজীবি, সে তো গরীব নয়। তাহলে সে কেনও অনিয়ম করে সরকারি শ্রমিক দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করাবেন। তারা জানান, এই ওয়ার্ডে অনেক সরকারি রাস্তা আছে, রাস্তাগুলোর প্রায় জায়গায় ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা । এইসব রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শতশত মানুষ যাতায়াত করে। এই ভাঙ্গাচোরা রাস্তাগুলো মেরামত না করে সরকারি শ্রমিক দিয়ে মেম্বার তার আত্মীয়ের ব্যক্তিগত কাজ করছেন। অথচ এই রাস্তায় কাজ হয় না।

তারা বলেন, কয়েক মাস পূর্বে বি,এস শামসুল আলম খান সরকারি সার নিয়েও অনিয়ম করেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এহেন কাজ শোভনীয় নয়। কর্মসূচির লেবার সরদার মো. বেলাল হোসেন বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম খান অফিসের কাজে লোক লাগবে বলে তার ব্যক্তিগত কাজে লোক লাগিয়েছেন। আগে জানলে আমি লোক দিতাম না।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যের আত্মীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কথার কোনও উত্তর না দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এবিষয়ে আমি জানি না। বিষয় টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই প্রকল্পের সভাপতি ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আয়তুল ইসলাম জানান, এবিষয়ে আমি জানি না। যদি করেই থাকে ভুলবশত এই কাজটি হয়েছে। আর এরকম হবে না।
বদলগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। কর্মসূচির লোক দিয়ে কেউ ব্যক্তিগতভাবে কাজ করতে পারে না। যদি করে থাকে তাহলে আমি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিবো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আর এই কাজ করা যায় কি না আমি জেনে বলতে পারবো বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. আলপনা ইয়াসমিন জানান, এটা স্থানীয় সরকারের কাজ। এই প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে অন্য কেউ কাজ করাতে পারে না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।