নরসিংদীতে গ্রামাঞ্চলে সালিশ বিচার এখন টাকার বিনিময়ে, হাতাশ সাধারণ মানুষ

নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে গ্রামে সম্প্রীতি সময়ে নামে মাত্র সালিশ বিচারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এর অন্তরালে লুকিয়ে থাকে বিরাট রহস্য। তেমনি এক ভুক্তভোগী রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি গ্রামের রিক্তা বেগম (২০)। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়ীর উঠানের জায়গা-সম্পদ নিয়ে আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হয়। কিন্তু আমার অর্থ সম্পদ কম থাকায় এবং আমি গরীব হওয়ায় গ্রামের সালিশ দরবারের প্রধানেরা আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে অধিক অর্থ নিয়ে বিগত সময়ে আমার বিরুদ্ধে সালিশ দরবার করেছে। এর সাথে স্থানীয় ইউপি সহ আরো গন্যমান্য অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্ব রয়েছে।

রিক্ত বেগম আরো অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সহ এমন কিছু লোক আছে যাদের নাম বললে আমাকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করা হবে। বর্তমানে আমি এবং আমার মা অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছি। বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেও আমরা কিছুতেই রেহাই পাচ্ছি না। বরং প্রতিনিয়ত হুমকির কবলে পড়তে হচ্ছে আমাদেরকে। আমাদেরকে সন্ত্রাসী মেহেদী ও জাহাঙ্গীরের চাপে বসতে হচ্ছে শালিসে। কিন্তু শালিসের ফলাফল আমরা আগে থেকেই জানি।

যেহেতু সন্ত্রাসীরা একটি প্রতাবশালী মহল। ইউপি চেয়ারম্যান সহ সদস্যগণ তাদের কথাই বলছে। এই সময়ে আমরা শালিসে বসার জন্য রাজি না হলে আমাদেরকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাই নীরবে এই শালিসে বসতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। আমাদের আকুতি মিনতি শুনার মতো কেউ নাই। কারণ বর্তমানে টাকার কাছে বিক্রি হচ্ছে গ্রাম্য শালিস।

এদিকে একই এলাকার বাসিন্দা আরেক ভুক্তভোগী আছমা আক্তার বলেন, রিক্তা আক্তার কখনো সঠিক বিচার পাবে না। কারণ আমার মতো টাকা নেই তার। আমিও রিক্তা বেগমের মতো চরম ভোগান্তির শিকার। আমি জায়গা সম্পত্তি নিয়ে গ্রাম্য সালিশ বসালে কোন সঠিক বিচার পাই নি। বরং টাকার কাছে বিক্রি হয় এখন গ্রাম্য সালিশ।

অথচ যুগে যুগে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সালিশ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সমাজের নানা অসঙ্গতি অন্যায়-অবিচার দূর করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক বিচার ব্যবস্থা মানুষকে অনেক শান্তি স্বস্থি ও নিরাপদ করেছে। আর এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে সমাজহিতৈষী কিছু সালিশ ব্যক্তিদের জন্যে। স্বেচ্ছাসেবামূলক এসব কাজে নিজের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে সালিশিরা নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করতেন। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষ এখন টাকার জন্য হিং¯্র প্রাণী হয়ে গেছে। টাকার নেশায় সালিশী প্রধানেরা অযথা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষুদ খুঁজতে ব্যস্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।