দোকানে দোকানে সত্যায়িত!

নরসিংদীর পাসপোর্টে অফিসের সিকিউরিটি গার্ডই যখন দালাল!

নরসিংদী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে আব্দুল কাদির কাদির মোল্লা সিটি কলেজের হোস্টেলের সামনে নরসিংদীর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে চলছে রমরমা অবৈধ সিল ও সত্যায়িত এর ব্যবসা।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসের মূল গেইটের সামনে দুই পাশের দোকানে চলছে জমাজমা অবৈধ সিল এবং সত্যায়িত এর ব্যবসা। এসব দোকানদার এবং দোকানে থাকা দালালরা দূর দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা বিভিন্ন অসহায় লোকদের টার্গেট করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় তাদেরকে নয়-ছয় বুঝিয়ে নিচ্ছেন অধিক টাকা।

এদিকে নরসিংদী পাসপোর্ট অফিসের সিকিউরিটি গার্ডরা সরাসরি টাকা খাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায় যে, পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডের হাতে ১০টির মত ফাইল রয়েছে।
এবিষয় তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এরা আমার আত্মীয়-স্বজনেরা।’

কিন্তু এই অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা নাছিমা অভিযোগ করে বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের এই সিকিউরিটি গার্ড মোটা অংকের টাকা নিয়ে আমার কাছ থেকে ফাইল নিয়েছে এবং আধা ঘন্টার মধ্যে ফিঙ্গার করে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’

রায়পুরা থেক পাসপোর্ট করতে আসা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সৌদি আরবে যেতে স্থানীয় দালাল ১৫ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট করতে বলেছেন। তাই এতো তাড়া তার।
কিন্তু অনেকক্ষণ যাবৎ পাসপোর্ট অফিসের এখানে সেখানে ঘুরতে হচ্ছে নাজিম উদ্দিনকে।
এই অফিসের পাশে থাকা দোকনগুলো থেকে এক দালালের মাধ্যমে ফরম পূরণ বাবদ ৩০০ টাকা ও সত্যায়িত বাবদ ৫০০ টাকা খরচও করেছেন নাজিম উদ্দিন। অন্যদিকে অন্যায়ভাবে প্রায় ৬০০০ টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা দালালচক্র।’

শুধু নাজিম উদ্দিনই নন, দালালচক্রের ফাঁদে পা দিয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকেই। সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তাদের সিল নকল করে জাল সত্যায়িত করছেন দালালরা। বিনিময়ে দুই থেকে তিনশ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের কাছ থেকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাসপোর্ট করতে আসা মানুষ দেখলেই ছুটে আসছেন আশপাশের দোকান থেকে দালালসহ সিকিউরিটি গার্ড। পরে পাসপোর্ট অধিদফতরের পাশে নিয়ে গিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

পাশে দোকানে থাকা এক দালাল বলেন, ‘সত্যায়িত করলে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা অ্যাডভোকেট দিয়ে সত্যায়িত করাবো, কোনো সমস্যা নাই। ৮ দিনেই পাসপোর্ট দেবো, নেবো ১৪ হাজার টাকা। তবে সত্যায়িত করতে নেবো পাঁচশ’ টাকা। আমার নিজের দোকান আছে, কোনো সমস্যা নেই। আমরা কাউকে কোনো হয়রানি করছি না।’

এ বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দেবনাথ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আপনি আমার অফিসে আসেন, বিষয়টি দেখে আমি ব্যবস্থা নিবো।’