নিজের পছন্দে বিয়ে করায় ভাইয়ের গুলিতে নিহত বোন

নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করায় পাকিস্তানের মুলতানে বোনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ভাই। মঙ্গলবার মুলতান হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে তাকে হত্যা করা হয়।

বিয়ের ব্যাপারে ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মুলতান হাইকোর্টে শুনানির জন্য আসেন কুলসুম। আদালতের বাইরে ভাই জুলকারনাইন অতর্কিতভাবে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় তার। এসময় কুলসুমের স্বামী রাফাকাত আলী, তাদের আইনজীবী এবং আরও একজন গুরুতর আহত হন।

তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী নিসতার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কুলসুমের স্বামীর অবস্থা গুরুতর। কুলসুমের ভাইকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে হত্যা এবং হত্যাচেষ্টার মামলা করেছে পুলিশ।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ পাঞ্জাবের বিভ্ন্নি জেলায় তিনজন নারী অনারকিলিংয়ের শিকার হয়েছেন। মিরানপুরে আসলাম নামের এক ব্যক্তি পরকীয়ার অভিযোগে তার ২৬ বছর বয়সী স্ত্রী শরিফা বিবিকে হত্যা করেন। ভাতিজা ইসমাইলের (২২) সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগে স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি।

একইভাবে রাজনপুরে ৫৫ বছর বয়সী পিরান দিত্তা তার স্ত্রীর আগের স্বামীর পক্ষের মেয়ে হাসিনাকে (২২) প্রতিবেশির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে হত্যা করেন। ওই এলাকায় হাফসা নামের এক তরুণীকে একই অভিযোগে তার ভাই হত্যা করে।

গত দুই বছরে দক্ষিণ পাঞ্জাবে অনার কিলিংয়ের নামে খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে প্রদেশে প্রত্যেকদিন গড়ে অন্তত ৫ জন নারী খুন হন। দেশে অনারকিলিং বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস আগে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নারী আইনপ্রণেতারা জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে আলোচনার জন্য একটি নোটিশ উপস্থাপন করেন।

শাজিয়া মারি, বেলুম হুসনা, মেহেরিন ভুট্টো, শাজিয়া সবিয়া, শাহিদা রেহমানি স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, অনারকিলিং বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা মানবাধিকার মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। … বিশেষ করে নিষ্ঠুর ঘটনার প্রতি… বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়ার তরুণী হিনা শাহ নওয়াজকে অনারকিলিংয়ের নামে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে।

তবে পাকিস্তানে অনারকিলিংয়ের দায়ে শাস্তি হওয়ার নজির নেই বললেই চলে। সম্মান রক্ষার জন্য পরিবারের কোনো সদস্যকে অন্য সদস্য হত্যা করার পর মামলা হলেও তাদের শাস্তি হয় না।

কারণ, অনারকিলিং হলো, পরিবারের কোনো সদস্য তাদের সম্মান নষ্ট করেছে মনে করলেই তাকে হত্যা করেন। এক্ষেত্রে কোনো ভাই তার বোনকে অনারকিলিং করলে আদালতে তার বিচারে মা কিংবা বাবা যদি ছেলেকে নির্দোষ দাবি করেন, তাহলে আদালত তাকে আর সাজা দেন না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রোশের বশে পরিবারকর্তৃক এই হত্যাকাণ্ড সম্মানের ধুয়া তুলে খুনিদের শাস্তির আওতার বাইরে রাখে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও দেশটিতে বন্ধ হচ্ছে না অনারকিলিং।

সূত্র : দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।